অবসরে পাঠানো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের পাওনা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
পাওনার হিসাব চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে অর্থ বিভাগ। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের এই কমিটি আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছে অর্থ বিভাগ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অবসরে পাঠানো শ্রমিক-কর্মচারীদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে চায় সরকার।
অর্থ বিভাগের চিঠি থেকে জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার হিসাব যাচাই-বাছাইকরণে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহকে। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব নুর উদ্দিন আল ফারুক।
সদস্যরা হলেন- অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন, অতিরিক্ত হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুমিনুল হক ভুইয়া ও বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপমহাহিসাব নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমান সরকার।
কমিটি সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধানের আলোকে অবসরপ্রাপ্ত ও স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা নির্ধারণ করবে। আদেশ জারির পর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি। প্রয়োজনে কমিটির সদস্য কো-অপ্ট করা যাবে।
এ কমিটির বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুর রউফ গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রমিকদের এ মাস থেকে দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) নোটিশ পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে। এ সময় মিলগুলোতে কাজ হোক আর না হোক শ্রমিকরা তাদের বেতন সময়মতোই পেয়ে যাবেন। এই সময়ের মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা যার যার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (হিসাব) চলে যাবে। শ্রমিকদের যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি পুনরায় যাচাই-বাছাই করে তারপরই সরকারি টাকা ছাড় করবে। ইতোমধ্যে তারা কমিটি গঠন করেছে।
২৮ জুন লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে পাওনা দিয়ে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। বিজেএমসি’র অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল ছাড়া সবগুলোতেই উৎপাদন চলছে।
এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার। বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৪ বছরের মধ্যে মাত্র চার বছর লাভ করেছে। ৪৮ বছরে এই খাতে সরকারকে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। প্রতি বছর শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ মেটাতে সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
শ্রমিকদের অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা পাট মন্ত্রণালয় জানানোর পর ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, দুই লাখ টাকার কম যাদের পাওনা হবে, তাদের পুরো টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে। আর দুই লাখের বেশি পাওনা হলে ৫০ শতাংশ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে।
বাকি ৫০ শতাংশ টাকা দেয়া হবে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের আকারে। নিম্ন আয়ের শ্রমিক ভাইবোনদের জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এটি করেছেন।
ওইদিনই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাটকল শ্রমিকদের কীভাবে পাওনা পরিশোধ করা হবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানসহ পাট খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ১ জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিকের সমুদয় পাওনা এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
শ্রম আইন অনুযায়ী নোটিশ মেয়াদের অর্থাৎ ৬০ দিনের মজুরি। চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি, পিএফ তহবিলে জমাকৃত অর্থ এবং নির্ধারিত হারে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধা পাবেন।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি শ্রমিক গড়ে সর্বনিম্ন ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। স্থায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন শ্রমিক ও বদলি শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা একসঙ্গে পরিশোধ করা হবে।