করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ধাক্কা কাটতে না কাটতেই ইতালিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। আর এর জন্য প্রবাসীদের, বিশেষ করে বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে দায়ী করছে স্থানীয় গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা। নতুন সংক্রমণ রোধে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার ইতালীয় পত্রিকা ‘ইল মেসেজারো’ এক প্রতিবেদনে বলছে, ইতালির সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত কাজ করছে না। বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে সেখানে করোনার বিস্তার ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই নতুন করে সহস্রাধিক অভিবাসী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
পত্রিকাটি বলছে, গত কয়েকদিনে লাজিও শহরে অন্তত ১২৪ বাংলাদেশি অভিবাসী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, পেরু, ব্রাজিল, মেক্সিকোর কিছু নাগরিকের শরীরেও পাওয়া গেছে এই ভাইরাস। এমিলিয়া-রোমাগনা অঞ্চলেও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। একই অবস্থা ভেনেতো, ক্যাম্পানিয়া, ফ্রিউলি, ট্রেনটিনো এলাকাতেও।
নতুন করে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে তার কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক জিয়ানি রেজা।
তিনি বলেন, ‘বহিরাগতদের মাধ্যমে বিস্তারের কারণে বেশ কিছু অঞ্চলে সংক্রমণের সূচক কোটা-১ ছাড়িয়ে গেছে। অঞ্চলগুলো নতুন করে সংক্রমণ দেখছে, কারণ তারা (অভিবাসী) বাইরে থেকে ইতালিতে ঢুকছে। কিন্তু, মন্ত্রী স্পেরাঞ্জা (স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জা) কি তাদের আগমন বন্ধ করেছেন, পুরোপুরিভাবে? কিছু নমুনা দেখানোর জন্য তিনি করেছেন ১৩টি দেশের জন্য, বাংলাদেশ থেকে পেরু পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তার বলেন, ‘এরই মধ্যে শত শত মানুষ ইতালি প্রবেশ করেছে। ফলে লাজিও শহরে বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায়ের (তিন হাজারের বেশি) মধ্যে ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ‘নিষিদ্ধ’ দেশের তালিকাও অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হচ্ছে। গতকাল থেকে দুই ভারতীয় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।’
রেজা বলেন, ‘বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশটি (ভারত) স্পেরাঞ্জার কারণে (নিষেধাজ্ঞা থেকে) বেঁচে গেছে।’
তার কথায়, আক্রান্তের সংখ্যা ‘প্রতীকী’ মাত্র। যেমন, গতকাল (শনিবার) লাজিও শহরে ১৯ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই বহিরাগত (আটজন বাংলাদেশি যারা নিষেধাজ্ঞার আগে ইতালি ঢুকেছেন, দুইজন ভারতের, একজন মিসরের ও একজন হাঙ্গেরির নাগরিক)।’
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে যাতায়াত নিষিদ্ধ দেশের তালিকা আরও বড় করার দাবি জানিয়েছেন ইতালির বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমিত দেশের নাম ওই তালিকায় না থাকা খুবই দৃষ্টিকটু। তারা দ্রুত এ ধরনের দেশগুলোর সঙ্গেও যাতায়াত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।