বর্তমান শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই পৃথিবীর জনসংখ্যা অনেক কমে আসবে। নতুন শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ বাংলাদেশের জনসংখ্যা নেমে আসতে পারে বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। সম্প্রতি বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে এ গবেষণা প্রতিবেদন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ৮০ বছর পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমে ৮ কোটি ১৩ লাখে দাঁড়াতে পারে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হলে এই সংখ্যা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৯ লাখ। ৮০ বছর পর এই সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৮ কোটি ১৩ লাখে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জিত হলে তা আরও কমে হবে ৭ কোটি ৪১ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকবে ২০৩৯ সালে। ওই সময় দেশের মোট জনসংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৭ কোটি ৩৪ লাখ।
এই সময়ে বাংলাদেশে জন্মহারও কমে আসবে অনেকটা। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে জন্মহার ছিল প্রায় ২ শতাংশ। ২১০০ সালে এটি কমে আসতে পারে ১ দশমিক ১৯ শতাংশে। আর এসডিজি অর্জন করলে এটি দাঁড়াবে ১ দশমিক ১৭ শতাংশে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৮০ বছর পর বিশ্বের মোট জনসংখ্যা হতে পারে ৮৮০ কোটি, যা জাতিসংঘের পূর্বানুমানের চেয়ে প্রায় ২০০ কোটি কম। বিশ্বের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ থাকবে ২০৬৪ সালে, প্রায় ৯৭০ কোটি।
বাংলাদেশের মতো স্পেন, জাপান, ইতালির জনসংখ্যাও অর্ধেক কমার সম্ভবনা রয়েছে। তবে আগামী ৮০ বছরে আফ্রিকার জনসংখ্যা বাড়বে প্রায় তিনগুণ।
এই শতাব্দী শেষে তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। ২১০০ সালের মধ্যে ৬৫ বছর বয়োসোর্ধ্বদের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২৪০ কোটি, বিপরীতে ২০ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা হবে মাত্র ১৭০ কোটি।
জনসংখ্যা কমার কারণ হিসেবে নারীশিক্ষার উন্নয়ন এবং জন্মনিরোধক পদ্ধতি সহজলভ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। উদাহরণস্বরূপ, আগামীতে আফ্রিকার জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়লেও সেখানকার জন্মহার যথেষ্ট কমে আসবে। ২০১৭ সালে এ অঞ্চলে জনপ্রতি নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ৪ দশমিক ৬ হলেও ২১০০ সালে তা কমে দাঁড়াবে মাত্র ১ দশমিক ৭-এ।
গবেষকদের মতে, নারীশিক্ষার বিস্তার, সহজলভ্য গর্ভনিরোধ সুবিধা এবং জন্মহার হ্রাসের ধারা কোনওভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান