জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়ায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঈদের পর মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ২০ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে পাপিয়া ও সুমনকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিবেদন সম্পন্ন করার কথাও জানান অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানের বিষয়ে শাহীন আরা মমতাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের অনুসন্ধান কাজ প্রায় শেষ। প্রতিবেদনের সব কাজ সম্পন্ন করেছি। ঈদের আগেই মামলার সুপারিশসহ অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করব। তবে ঈদের আগেই তার বিরুদ্ধে মামলার করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না, সময় খুবব কম। ঈদের আগে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
তিনি জানান পাপিয়ার ৪ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া ছাড়াও ওয়েস্টিন হোটেলের তিনটি কক্ষে তার বিপুল পরিমাণ ব্যবহৃত সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। সেখানে তারা নতুন ১০০ জোড়া সেন্ডেল ও বিপুল পরিমাণ সাজ সরঞ্জামাদির সন্ধান পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
পাপিয়া ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নামে নরসিংদীর প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে ৮টি হিসাবের খোঁজ পায় দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবেও বিপুল টাকা জমা এবং লেনদেন থাকলেও আয়ের বৈধ কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে চলতি বছরের ১ মার্চ পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে মাদক ও জাল টাকার কারবারে সম্পৃক্ততা মিলেছে পাপিয়া ও সুমনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয় করা কোটি কোটি টাকার মুদ্রা পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতার কথাও জানায় দুদক।
অনুসন্ধানে পাপিয়ার যেসব অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর মধ্যে হোটেল ওয়েস্টিনে বিল হিসাবে জমা সাড়ে ৩ কোটি টাকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা নগদ ৬০ লাখ টাকা, নরসিংদী শহরে একটি বাড়ি ও ঢাকার ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট ইত্যাদি।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা পাপিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদনটি মঞ্জুর করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করলে গত ২০ জুলাই তাদের কাশিমপুর মহিলা কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
করোনার কারণে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সিআইডির করা অর্থ পাচার মামলাটির তদন্ত কাজের অগ্রগতি কিছুটা ধীরগতিতে চলছে বলেই সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের বিশষে সূত্র থেকে জানা যায়। সূত্রটি থেকে থেকে জানা যায় শিগগিরিই অন্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা র্যাবের আগের তিন মামলার দুটি তদন্ত করোনা মহামারির কিছুটা ধীর গতি বলে জানা যায়। এছাড়া ২৯ জুন অস্ত্র আইনের মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১-এর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আরিফুজ্জামান।
উল্লেখ্য, আলোচিত ও বহিষ্কৃত এই যুবলীগ নেত্রীকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি র্যাব ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশষে অভিযানের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব। একই সময় গ্রেপ্তার করা হয় পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরীসহ আরও ৫ জনকে। গ্রেপ্তারের পর বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় তিন মামলা করে র্যাব। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়াকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে।