কক্সবাজার এসপির প্রত্যাহার ও দোষীর ফাঁসি চায় ‘রাওয়া’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার এসপির প্রত্যাহার ও দোষীর ফাঁসি চাই 'রাওয়া'

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপারের (এসপি) প্রত্যাহার চায় রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। একই সঙ্গে টেকনাফ থানার ওসিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোসহ দোষীদের তিন মাসের মধ্যে ন্যায়বিচার করে ফাঁসির দাবি জানান তারা।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া’র হেলমেট হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার।

universel cardiac hospital

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করতে হবে। তদন্ত চলাকালীন যাদের নাম আসবে তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। এছাড়া কক্সবাজারের এসপিকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ওই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, তথ্য গোপন করে মিডিয়ায় মিথ্যা বিবৃতি দেয়া এবং একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি কাল্পনিক ও বানোয়াট মামলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তোলা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ, প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত ও ট্রাক ড্রাইভারসহ সব সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুরূপ একটি ভিন্ন মন্ত্রণালয় (ভেটেরান মন্ত্রণালয়) গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিরাপদ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপনে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্বিক বিষয়গুলো অবহিত আছেন এবং যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার সম্পন্ন করে সব সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন’—বলে আশা প্রকাশ করে রাওয়া।

রাওয়া আরও জানায়, ‘সাক্ষীদের পরিচিত বা আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমেও যেন সাক্ষীদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি না করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া কালক্ষেপণ না করে এই মামলার দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জবাবদিহিমূলক আইন প্রণয়ন করে, সেই অনুযায়ী বাহিনীকে পুনর্গঠিত করতে হবে। রাষ্ট্রের সব অস্ত্রধারী বাহিনীকে অবশ্যই সংবিধান মোতাবেক সুশৃঙ্খল হওয়া বাধ্যতামূলক। কোনোভাবেই ওই ঘটনার সঙ্গে যেন কোনো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়িত না হয়, সেদিকে সবার সদয় দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।’

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৩১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরে তা পুনর্গঠন করা হয়।

গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে