কোডিভ-১৯ মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গ্রেফতার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
বৃহষ্পতিবার সকালে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফলে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত রায়হানকে রিমান্ডে থাকতে হবে।
রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা জানান, বুধবার রাতেই তারা জানতে পারেন রায়হানকে আজ আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ড চাইবে পুলিশ। সে অনুযায়ী তারা আদালতে হাজির হন। তবে আদালতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
সুমিতা শান্তিনি কিষনা জানান, রায়হান আগের মতোই বলেছে, তিনি যা দেখেছেন তাই বলেছেন। তবে মালয়েশিয়ার কাউকে আহত করা তার উদ্দেশ্যে ছিল না। রায়হানের বিরুদ্ধে এখনও কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে বুধবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদের বরাতে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম জানায়, রায়হান কবিরকে ৩১ আগস্ট বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে দিজাইমি দাউদ বলেন, রায়হান কবিরের বিষয়ে তদন্ত শেষ করে করেছে পুলিশ এবং তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরে পাঠানো হয়েছে।
তার ভ্রমণের পাস বাতিল করা হয়েছে। তদন্ত চূড়ান্ত হলে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি রায়হানকে মালয়েশিয়ায় কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান।
এরপর রায়হান আর কখনও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ শিরোনামে গত ৩ জুলাই ২৫ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সেখানে সাক্ষাৎকার দেন রায়হান কবির।
প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকার এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে আল-জাজিরার এমন প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করে। এরপর রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিটও (ভিসা) বাতিল করা হয়।
গত ২৪ জুলাই কুয়ালালামপুরের জালান পাহাংয়ের একটি কনডোমিনিয়াম থেকে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের স্পেশাল ব্রাঞ্চের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, মহামারির সময়ে মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডারের (এমসিও) মাধ্যমে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ার নিপীড়নের ছবিটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গভীর উদ্বেগের।