পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি অনেক স্পর্শকাতর এবং চাঞ্চল্যকর। আদালতের নির্দেশে র্যাব এই মামলার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। তাই সবধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে মামলাটির তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এলিট ফোর্সটি।
বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন র্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাব এটা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে৷ সেই মোতাবেক আদালত তিন আসামিকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তারা হলেন- পরিদর্শক প্রদীপ কুমার সাহা, সাব-ইন্সপেক্টর লিয়াকত এবং নন্দ কুমার রক্ষিত।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে র্যাব এই মামলার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। কোনো প্রকার প্রভাব ছাড়াই র্যাব নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত এবং এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। ঘটনাটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মোট নয়জন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে সাতজন আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকি দুজন আসামির বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তাদের বিষয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘এই মামলায় নির্ধারিত কোনো সময়সীমা নেই। তবে সাত দিনের মধ্যে টেকনাফ থানাকে এই মামলার দায়িত্বভার কক্সবাজার ব্যাটেলিয়নকে (র্যাব-১৫) বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল আদালত টেকনাফ থানার ওসি (সদ্য প্রত্যাহার) প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আর চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে।
এর আগে বিকালে ওসি প্রদীপসহ আত্মসমর্পণ করা সাত আসামির সবাইকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে র্যাব। শুনানি শেষে আদালত তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
বুধবার দুপুরে নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় র্যাবকে। একই দিন পুলিশ সদরদপ্তর ওসি প্রদীপকে প্রত্যাহার করে।
সিনহার বোনের করা মামলায় বাহারছরা তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং ২ নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার সদ্যসাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। তারা ছাড়াও আরও সাতজনকে এজহারভুক্ত আসামি করা হয়। তারা হলেন- এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।
এর আগে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
এই ঘটনায় গতকাল বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান ও আইজিপি কক্সবাজার সফর করেছেন। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এই ঘটনা দুই বাহিনীর দীর্ঘদিনের পারস্পরিক সুসম্পর্কে চিড় ধরবে না। সুষ্ঠু তদন্ত এবং সুবিচারের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে ও তদন্তকার্যে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা হবে না। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালিত হবে এই মর্মে স্ব স্ব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনহা রাশেদের মাকে ফোন করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।