বিএনপি করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে অনুষ্ঠিত বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ না নিলেও ঢাকায় শূন্য হওয়া দু’টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেবে।
দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত এমন ঘোষণা না দিলেও এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি কিছু নেতা বলছেন, অন্যান্য এলাকার চেয়ে ঢাকার মাঠ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানকার উপ-নির্বাচনে ছাড় দেবে না বিএনপি।
গত ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা, আর ১০ জুলাই ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মারা যান। তাদের মৃত্যুতে এই দু’টি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। সুবিধাজনক সময়ে এ দুই আসনে ভোটের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
রাজধানীর এ দুই আসন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পাশাপাশি একাধিকবার সরকার গঠন করা বিএনপিতেও চলছে নানা আলোচনা।
বিএনপির একজন যুগ্ম-মহাসচিব মত ও পথকে বলেন, ঢাকার রাজনীতির সাথে অন্যান্য এলাকার রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ভিন্ন। তাছাড়া ঢাকায় বিএনপির নেতাকর্মী, ভোটার ও সমর্থক বেশি; সবাইকে সুসংগঠিত রাখতে নির্বাচনে যাওয়ার বিকল্প নেই।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, যখন ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনে উপ-নির্বাচন হবে, তখন করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। এদিক বিবেচনায় রেখে নির্বাচনের জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি রয়েছে নেতাকর্মীদের। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে এমন ‘সংকেত’ পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। ডিজিটাল মাধ্যম কিংবা নিজ বাসায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন তারা।
সূত্রমতে, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রবেশমুখের এই দু’টি আসন রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের কাছে। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগকে এই দু’টি আসন ছেড়ে না দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জোরালো মত দিয়েছেন। করোনাকালে স্থবির হয়ে যাওয়া সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা হলেও এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে গতি লাভ করতে পারে বলে আশা নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে ঢাকার উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির নেতা নবী উল্লাহ নবী। উপ-নির্বাচনে নবী উল্লাহ নবী যেমন নির্বাচন করতে চান, তেমনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন আরও কয়েকজন। অংশ নিতে চান বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং এই আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদও।
সালাহউদ্দিন মত ও পথকে বলেন, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সফল এমপি হিসেবে স্থানীয় নেতাকর্মী, সমর্থক, গণ্যমান্য বাক্তিরা আসন্ন উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারও ঢাকা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। কিন্তু উপ-নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার তেমন আগ্রহ নেই বলে শোনা যাচ্ছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী।
নিজের নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা জানিয়ে কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, উত্তরায় আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ৩২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। শতাধিক মামলার আসামি হয়েছি। দলের জন্য আগামী দিনেও সমানভাবে কাজ করে যেতে চাই। ঢাকা-১৮ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয় উপহার দিতে আমি সক্ষম হবো।
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বাহাউদ্দিন সাদী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সঙ্কটকালীন মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার থেকেও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমরা সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে আপাতত প্রচার বন্ধ রেখেছি। তবে যে কোনো সময় পূর্ণ শক্তিতে প্রচার-প্রচারণা চালানোর মতো সাধ্য এবং সামর্থ্য দুটোই আল্লাহর রহমতে আমার রয়েছে।