বৈরুত বন্দরে মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবার পর লেবাননের সরকার পদত্যাগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব সোমবার লেবাননের রাষ্ট্রীয় টিভিতে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু গোটা মন্ত্রিসভার পদত্যাগের জন্য চাপ বাড়ছিল। অনেকেই লেবাননের নেতাদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই বিস্ফোরণের জন্য তাদের দায়ী করছে।
প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই বলেছিলেন বৈরুত বন্দরে ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে যেভাবে মজুদ রাখা হয়েছিল তাতে আগুন ধরে গিয়েই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরকার বৈরুতে মজুদ করে রাখতে দিয়েছিল – এ কথা জানার পর লেবাননের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়।
বিস্ফোরণের পর দুদিন ধরে বৈরুতে বিক্ষোভ হয় এবং বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে এবং এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়।
বিচারমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী এর আগে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার আগেই অর্থমন্ত্রীও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
ওদিকে আল মারসাদ অনলাইন নিউজ নামে একটি সংবাদ পোর্টালে বৈরুত শহরের মেয়র মারওয়ান আবুদকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে, বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০, এবং ১১০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি আর জাদিদ টিভি চ্যানেলেও বলেছেন নিখোঁজদের মধ্যে বহু বিদেশি কর্মী এবং লরি চালক রয়েছেন। তিনি বলেছেন তাদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।
লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা ধ্বংসস্তুপ থেকে মানুষ উদ্ধারের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ জীবিত আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
শহরের অন্যত্র লাখ লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত বাসাবাড়িতে কোনমতে থাকছে। এসব বহু বাড়ির জানালা ও দরোজা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির একজন মুখপাত্র বলেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের ‘ব্যাপকমাত্রায়’ জরুরি সাহায্য প্রয়োজন।
‘এদের আশ্রয় দরকার, খাদ্য দরকার। তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার জন্য সামগ্রী প্রয়োজন, বিধ্বস্ত বাসায় যা অবশিষ্ট আছে তা সংগ্রহ করার জন্য তাদের সাহায্যের প্রয়োজন,’ বিবিসিকে বলেছেন রোনা হালাবি।
রেড ক্রসের এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘এরপরেও বৈরুতের অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সহায়তা দরকার, পানি ও বিদ্যুত সরবরাহের দুটি প্রধান কেন্দ্র বিস্ফোরণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা বন্দরে সন্ধান তৎপরতায় উদ্ধার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ জীবিত কাউকে আর পাওয়া যায়নি।
বৈরুতের উপকণ্ঠে একটি কনভেন্ট গৃহহীনদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা তাদের খাদ্য, পানীয় ও কাপড়চোপড় জোগাচ্ছে।
কনভেন্টের একজন যাজিকা বলেছেন ক্ষয়ক্ষতির যে ছবি দেখা যাচ্ছে প্রকৃত পরিস্থিতি তার থেকে অনেক ভয়াবহ।
কর্মকর্তারা বলছেন ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের বেশি। -বিবিসি