আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের দায়ের করা মামলার তিনজন সাক্ষীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার সন্ধ্যায় র্যাব সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানান বাহিনীটির মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
মুখপাত্র বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম নামে তিনজন সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ছিলেন। এরপর তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে উপস্থাপন করলে প্রত্যেকের সাত করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনায় কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন সিনহার বোন। সেই মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ কারাগারে রয়েছে। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব।
এদিকে তিন আসামির অন্যতম নুরুল আমিনের মা তার ছেলেকে তুলে নেয়া হয়েছে অভিযোগ এনে টেকনাফ থানায় যে মামলাটি করেছেন এই মামলার বিষয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো নিয়েও আদালত একটি আইনসম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, এই তিনজনের মধ্যে একজন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য। তিনি আগেই পুলিশ ফাঁড়িকে খবরা-খবর দিয়েছিলেন। একজন এই হত্যার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন। তারা হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ থাকার কারণে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিন সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হলো কিসের ভিত্তিতে এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মামলাটি তদন্ত কার্যক্রম র্যাব করছে। র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে মামলার নথিপত্র ও আলামতসহ সামগ্রিক বিষয়ে বুঝে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন এই মামলার তিন সাক্ষী সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। আসামিদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেপ্তার করেছেন।
মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার তদন্তে র্যাব-পুলিশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বের আশঙ্কা রয়েছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের মামলাটি অনেক স্পর্শকাতর। এই মামলা দিয়ে কোনো ধরনের অসহযোগিতা বা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। র্যাব অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এই মামলার তদন্ত করছে। র্যাব শুধু হত্যাকেন্দ্রিক যে মামলাটি হয়েছে সেটির তদন্ত করছে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তার কার্যক্রমের প্রথমেই সে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলবেন। ইতিমধ্যে সিফাত ও শিপ্রার সঙ্গে আমাদের যোগযোগ হয়েছে, এরপর পর্যায়ক্রমিকভাবে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনাকেন্দ্রিক ফোনালাপ ও ভিডিও ফুটেজসহ সব ধরনের তথ্য ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই করে তদন্ত কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই মামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের খুঁজে বের করা এবং হত্যার মোটিভ উদ্ধার করা।