ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি এড়াতে ১ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকাকেন্দ্রিক সকল উন্নয়ন প্রকল্প সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কোনো সংস্থা সমন্বয়ে না এলে সেই সংস্থাকে তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আয়োজিত আধুনিক ও জনকল্যাণমূলক মহানগরী বিনির্মাণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা জানান।
তাপস বলেন, অবশ্যই আপনারা আপনাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবেন, কিন্তু এক জায়গায় তিনবার রাস্তা কাটতে পারবেন না। সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে এক জায়গা একবারই কাটতে পারবেন। কিন্তু ১ অক্টোবরের মধ্যে সমন্বয়ে না এসে আপনাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য পরবর্তী সময়ে আপনারা কোনো তদবির করবেন না। আমি আপনাদের আপনাদের কোনো তদবির শুনবো না। আপনাদের প্রকল্পের ফান্ডিং বিশ্বব্যাংকের হোক, এডিবির হোক, জিওবির হোক বা অন্য কোন সংস্থার হোক, সমন্বয় ছাড়া সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।
এ সময় ডিএসসিসি মেয়র প্রশ্ন করে বলেন, ড্রেনেজ ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান তো হয়েছে, ২০১৬ সালে সেই প্লান করার পর তা বাস্তবায়নের কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে? ট্রান্সপোর্ট স্ট্র্যাটেজিক প্লান তো হয়েছে কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে বিআরটিএ কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে? অথবা যে কোঅর্ডিনেশন অথরিটি করা হয়েছে তারা কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে?
পপুলেশন প্ল্যানিং করার জন্য সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো তাজুল ইসলামকে আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ শহরেও পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা সম্বলিত নগরায়ন সৃষ্টি করা গেলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে।
ঢাকাকে বস্তি নয় রাজধানী বানানো হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকা হলো রাজধানী। ঢাকাকে আপনারা বস্তি বানাবেন না, ঢাকাকে রাজধানী (ক্যাপিটাল) বানান। আমরা রাজধানীর সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবো কিন্তু থাকার জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা পরিহার করতে হবে। লো-কাস্ট আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে তাদেরকে নদীর ওপারে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা ঢাকায় আসবে কাজকর্ম করে আবার ঢাকা থেকে চলে যাবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দেশটা একটা ছাতার মতো। এখানে সিটি করপোরেশন আছে, পৌরসভা আছে, রাজউক আছে, পূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আছে। করপোরেশন বলছে খাল এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা তাদের কাছে হস্তান্তর করতে। আমাকে এমনভাবে দিতে হবে যাতে করে সিটি করপোরেশন কাজ করতে পারে। সিটি করপোরেশনের কোথায় কোথায় সাপোর্ট প্রয়োজন, সক্ষমতা কোথায় বাড়াতে হবে? তা দেখতে হবে। সারা পৃথিবীতে করপোরেশন অবশ্য এই কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের সভাপতি জালাল আহমেদ, ভলিউম জিরো লিমিটেডের স্থপতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সভাপতি ড. আকতার মাহমুদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এস্রাজ উল জান্নাত, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের নগর ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ রাসেল কবির, ওয়েস্ট কনসার্ন এর নির্বাহী পরিচালক আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাকসুদ সিনহা, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি আ স ম হামিদুর রহমান, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহমেদ আখতারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন এবং নিজ নিজ অভিমত তুলে ধরেন।