পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ

মত ও পথ প্রতিবেদক

পোশাক তৈরির কারখানা
ফাইল ছবি

কোভিড-১৯-এর প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে ইউরোপ ও আমেরিকা। সেসব দেশের শিল্প-কারখানা, শপিং মলগুলোও খুলছে। ফলে পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে। ওই দেশগুলোতে গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ায় গত চার মাস আগের মজুদ করা পোশাক এখন বিক্রি করা যাচ্ছে না। আবার দীর্ঘদিন গুদামে থাকায় এসব পোশাকের গুণগত মানও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এসব পোশাক আগামী বছর পর্যন্ত রাখা সম্ভব হবে না। এরই প্রেক্ষাপটে সদ্যবিদায়ি মাস জুলাইতে দেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত জুলাইয়ে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে তিন কোটি ২৪ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। যেখানে এপ্রিল-মে মাসে পোশাকের রপ্তানি প্রায় ৮৫ শতাংশ কমে আসে। সেখানে জুলাইয়ে তা ২ শতাংশে নেমে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, স্থগিত ও বাতিল হওয়া পোশাকের অর্ডারগুলোও ফিরতে শুরু করেছে।

universel cardiac hospital

কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বে অন্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে অর্ধকোটির বেশি। মহামারির এই সময়ে তাই দেশটির ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তাতে বাজারটিতে শীর্ষ পাঁচ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানি কমেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ২৪৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯.৭৩ শতাংশ কম। অথচ ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০২০ সাল শুরু হয়েছিল। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ।

মার্চ ও এপ্রিলেও রপ্তানি নেতিবাচক হয়নি। তবে মে মাসে গিয়ে রপ্তানি ১২ শতাংশ কমে যায়। এদিকে করোনার কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি গত বছরের একই সময়ের  চেয়ে ৩০.৩৭ শতাংশ কম। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র আট হাজার ৩৮১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে।

গত মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম প্রথম স্থানে ছিল। জুনে সেটি দখল করে নিয়েছে চীন। তবে দেশটির পোশাক রপ্তানি চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৯ শতাংশ কমে গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের সঙ্গে করোনা ভাইরাস যোগ হওয়ায় এই দুর্দশা হয়েছে। তাতে ছয় মাস শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করছে চীনের উদ্যোক্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় ও চতুর্থ  পোশাক রপ্তানিকারক  দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভারত ১৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি কমেছে ৩২.০৯ শতাংশ। ভারতের বাজার হিস্যা ৪.৬৫ শতাংশ। 

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে যায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গত বছর ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, এই আয় ২০১৮ সালের চেয়ে ৯.৮৩ শতাংশ বেশি।

উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে বাংলাদেশে আসে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিও আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। তবে করোনায় নতুন করে বাজারটিতে খারাপ সময়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে