মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩২ জন। ফলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন হাজার ৬৫৭ জনে। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে আরও শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৪ জন। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩১৫ জন।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৭টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে ৯ হাজার ৬৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে ১০ হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন করে আরও ২ হাজার ২৪ জন শনাক্ত হন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরই এখন বাংলাদেশ। উৎসস্থল চীনকে ছাড়িয়েছে এ তিনটি দেশই। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ফ্রান্স ও কানাডাকে পেছনে ফেলে ১৫তম। ইতোমধ্যে সংক্রমণে ইতালিকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। আর এশিয়ার ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তুরস্ককে পেছনে ফেলে ৫ম। এর আগে রয়েছে ভারত, ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরব। দেশে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৬ জনের করোনা পরীক্ষা করে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
দেশে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩১৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ জনে।ফলে বর্তমানে সক্রিয় করোনা সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৪২ জন। রোগী শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩ হাজার ৬৫৭ জনে। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন এবং নারী ৭ জন।
২৪ ঘণ্টায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব নয়জন, ষাটোর্ধ্ব ১৯ জন ছিলেন। ঢাকা বিভাগের ছিলেন ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের তিনজন, খুলনা বিভাগের দুইজন, রাজশাহী বিভাগের ছয়জন, সিলেট বিভাগের দুইজন, রংপুর বিভাগের দুইজন এবং বরিশাল বিভাগের ছিলেন তিনজন। রোগী শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও জিংক-ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের করোনা আক্রান্ত মায়ের দুধপানে শিশুর করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পায়নি। অর্থাৎ, শিশুকে দুধপান করানো যাবে। তবে, এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার প্রতি বিশেষ আহ্বান জানানো হয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন দেয়া হয়। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।