বগুড়া জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের হেলাল খাঁ এবার দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলেন। মোট ১৪ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ পাট দুই হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। সে হিসেবে তিনি দুই বিঘা জমির পাট মোট ৩০ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে তার লাভ হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া আরও অন্তত ১০ হাজার টাকার পাট খড়ি বিক্রি করা যাবে।
পাট বিক্রি করে বেজায় খুশি হেলাল খাঁ। মত ও পথকে তিনি বলেন, ‘বহুদিন পর পাট বেইছা শান্তি পাইলাম।’
শুধু বগুড়ার হেলাল খাঁ নন; বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, পাটের মানভেদে দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার ৫০০ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে সারাদেশের কৃষকই এবার পাট বিক্রি করে খুব খুশি।
গত তিন-চার বছর ধরেই পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। গত বছর সিজনের শুরুতে ১৫০০-১৬০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেও পরে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করেছেন কৃষকরা। এবার সিজনের শুরুতেই পাটের দাম ভালো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর দেশে ৬৮ লাখ বেল (এক বেলের ওজন ১৮২ কেজি) পাট উৎপন্ন হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৮২ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট তিন লাখ ১৬ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমিতে এবার পাটের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক পাট কাটা হয়েছে। এবার ২৬ হাজার ৯৬ হেক্টর জমির পাট বানের পানিতে ডুবে গেছে। তারপরও গত বছরের চেয়ে এবার পাটের উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা করছেন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কৃষি তথ্যসেবার সূত্র অনুযায়ী দেশের ৪০ লাখ চাষি পাট চাষ করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবিকা পাটকে কেন্দ্র করে। প্রতি বছর মৌসুমে গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পান কৃষক। দেশের প্রায় সব জেলাতেই পাট উৎপন্ন হয়। তবে বেশি উৎপন্ন হয় ফরিদপুর, যশোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলায়। এসব জেলার পাটচাষিরা এবার পাটের ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি।
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার সোনামুখী গ্রামের পাটচাষি মান্নান মত ও পথকে বলেন, ‘এবার পাটের যেমন ভালো দাম, তেমনি পাট খড়িরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এবার সিজনের শুরুতেই দুই হাজার টাকার ওপরে উঠেছে পাটের দাম।’
তিনি বলেন, অনেক দিন পর পাট আবাদ করে লাভের মুখ দেখলাম। তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। যে দাম আছে তাতে খরচ বাদ দিয়ে ধানের চেয়ে বেশি লাভ হবে।
ফরিদপুরের পাটচাষি আপেল থাকেন ঢাকায় এবং ব্যবসা করেন। মাঝে মধ্যেই তিনি গ্রামে যান আবাদ করতে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘গত শুক্রবার দুই হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছি। পাটের টাকা পাইটে (কামলা) খায়-এবার এ কথাটি প্রযোজ্য নয়। দুই-তিন বছর ধারে পাটের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাটের সঙ্গে সঙ্গে পাটখড়ির চাহিদাও বাড়ছে। সবমিলে পাটচাষিরা খুশি।
তবে তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেন পাটের বর্তমান দাম থাকবে কি-না, তা নিয়ে। তিনি বলেন, এরপরে পাটের দাম কী হবে তা বলা মুশকিল। কারণ পাটের মিলগুলো সব বন্ধ। মিলগুলো চালু হতে দেরি হলে পাটের দাম কমেও যেতে পারে।
পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক সওদাগর মোস্তাফিজুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) মত ও পথকে বলেন, ‘এবার তো সিজনের শুরু থেকেই কৃষক পাটের ভালো দাম পাচ্ছে। ভালো দাম পেয়ে কৃষক আগামীতে পাটচাষে আরও উৎসাহিত হবেন।’
তিনি বলেন, এবার পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ লাখ বেল। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ লাখ বেল বেশি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মণ্ডল এক প্রশ্নের জবাবে মত ও পথকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কৃষকদের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে। তবে এবার কৃষক ধানের যেমন ভালো দাম পেয়েছে, তেমনি পাটেরও ভালো দাম পাচ্ছে। তারা দুই হাজার থেকে শুরু করে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ পাট বিক্রি করছে। এটা খুব খুশির খবর।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য বন্ধ পাটকলগুলো দ্রুত ব্যক্তিমালিকানায় দেয়া উচিত। উৎপাদন যেন ব্যহত না হয়। এতে যারা একসময় মিলগুলোতে কাজ করত তারাই আবার চাকরির সুযোগ পাবে। ফলে তাদেন বেকারত্ব ঘুচে যাবে।’