কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন হত্যার তদন্তকাজ পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সোমবার টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর লামারবাজার সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়কের চেকপোস্ট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। গত ৩১ জুলাই রাতে এখানেই পুলিশের গুলিতে মারা যান সিনহা রাশেদ। এ ঘটনায় সিনহার বোনের দায়ের করা মামলাটি আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে র্যাব।
সোমবার বিকালে র্যাব মহাপরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ওই এলাকার কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন।
র্যাব ডিজি বলেন, সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা পেশাদারিত্বের সাথে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। সব তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে সেখান থেকে চূড়ান্ত ফলাফল আসবে।
সিনহার কাছে অস্ত্র ছিল কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে আমরা সিনহার অস্ত্রের কথা বা কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তদন্তের পরে সবকিছু পরিষ্কার হবে।
এর আগে গতকাল রোববার এই মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গণশুনানি শেষ করে। পরে কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩ আগস্ট আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। সাত কর্মদিবসের মেয়াদে আগামী ২৩ আগস্ট আমাদের তদন্তের শেষ সময়। এই ঘটনার উৎস, কারণ এবং এটি প্রতিরোধে ভবিষ্যতে কী ধরনের সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করি। ঘটনা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি জায়গায় আমরা গিয়েছি, খোঁজ-খবর নিয়ে জায়গাগুলোর মানচিত্র তৈরি করেছি এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ প্রায় ৬০ জন থেকে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলের পাশে সরকারি স্থাপনা (শামলাপুর ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়) বেছে নেয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত কার্যের শেষ ভাগে পৌঁছেছি। ২৩ আগস্টের মধ্যে সরকারের কাছে আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। এরপর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর লামারবাজার এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ঘটনা সরেজমিনে তদন্ত করে কারণ ও উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। মামলায় পুলিশের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। এ মামলায় বর্তমানে সাত আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। বাকিরা হলেন এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। তদন্তের পর র্যাব পুলিশের মামলার তিন বাদীকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তারাও এখন কারাগারে রয়েছেন।