সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কিছু বাংলাদেশিকর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এজন্য সরকার তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ জানার চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে আমিরাতে নিযুক্ত ঢাকার দূতকে কারণ বের করার জন্য বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা বলছেন, একই ফ্লাইটে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে কিছু কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয় নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তবে অনুমান হিসেবে তারা বলছেন, হয়তো এসব বাংলাদেশির কাগজপত্রে কিংবা তারা যে কোম্পানিতে চাকরি করতেন সেখান থেকে কোনো সমস্যা হয়েছে।
এদিকে আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি থেকে ফেরত পাঠানো ৬৮ জন প্রবাসী দেশে পৌঁছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরের ভেতরেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বলছে, গত শনিবার বিশেষ ফ্লাইটে ২২০ জনকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমিরাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে ৮১ জন বাংলাদেশিকে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে অবশ্য সেখান থেকে আরও ১৯ জন গ্রহণ করে দেশটি। বাকি ৬২ জনকে সেখানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তত্ত্ববধানে রাখা হয়। দুদিন সেখানে হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে বিমান।
গতকাল বিমানের আরেকটি ফ্লাইটে আমিরাতে যাওয়ার উদ্দেশে টিকিট নিশ্চিত করা ১৬৫ জনের দেশটির থেকে দুইবার সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বা ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ৬৪ প্রবাসী বাংলাদেশিকে সেখানে পাঠানো হয়। সেখানে থেকেও ছয়জনকে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
পরে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট মোট ৬৮ জনকে আজ সকালে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সকালে এসব প্রবাসী ইমিগ্রেশন পার না হয়ে ভেতরেই বসে পড়েন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন।
আবুধাবি থেকে ৬৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, আসলে কী কারণে এদের ফেরত পাঠানো হলো এটা নিয়ে আমরা এখনো কনফিউসড। এখন সরকার এটা ইনভেস্টিগেট করে দেখছে। আমাদের দিক থেকে কোনো ঘাটতি ছিল না। তারা যেসব নিয়ম-নীতি দিচ্ছে সেগুলো আমরা মানছি। গতকাল আমাদের একটা ফ্লাইটে তাদের থেকে নেয়া সব কনফারমেশন দিয়ে ৬৫ জনের ক্লিয়ারেন্স আসছে। সেখান থেকেও ছয়জনকে ফেরত পাঠানো হলো। তারা নিশ্চিত করার পরও কেন ফেরত পাঠালো আমরা অফিশিয়ালি কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমরা অনুমান করতে পারি, ওখানে তাদের এমপ্লয়সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হতে পারে।
বিমানের কোনো ঘাটতি হলে দেশে ফেরত আসা এসব বাংলাদেশির অর্থ ফেরত দেয়া হবে জানিয়ে বিমানের এমডি মোকাব্বির হোসেন বলেন, আমাদের যেটা সতকর্তার সেটার কোনো ঘাটতি নাই। যদি বিমানের দোষ হয় সেটা আমাকে বিয়ার করতে হবে। যদি অন্য কারণে হয় সেখানেতো আমার কিছু করার থাকবে না।
আবুধাবিফেরত প্রবাসীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে
এদিকে আজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, আবুধাবি থেকে ফেরত এসব প্রবাসীকর্মীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাপূর্বক পুনরায় বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, আজকের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ফেরত আসা এসব বাংলাদেশিকর্মীসহ যেসব কর্মী আবুধাবি যাওয়ার উদ্দেশে টিকেট করেও যেতে পারেননি তাদের জন্য পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে প্রবাসী কর্মীর আবুধাবি থেকে ফেরত আসার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানপূর্বক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করবে।
২. ওই প্রতিবেদনের আলোকে উপর্যুক্ত ফ্লাইটে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী যাত্রীদের পুনরায় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কিংবা ক্ষেত্র মতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গন্তব্য দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৩. যেসব যাত্রীর বাংলাদেশ বিমানের টিকেট বুকিং দেয়া আছে, পরবর্তী ফ্লাইটসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের অনুকূলে টিকেট প্রদান করবে এবং এ ক্ষেত্রে টিকেটের জন্য যাত্রীদের অতিরিক্ত কোনো মূল্য পরিশোধ করতে হবে না।
৪. বিদেশ গমনেচ্ছু এবং দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ক্রমান্বয়ে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও ভালো হওয়ার সাথে সাথে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
৫. বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের টিকেটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বেবিচক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।