হঠাৎ করে গতকাল মঙ্গলবার দুই দিনের ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সফরের প্রথম দিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশেষ ও নিবিড় সম্পর্ক। এই কারণে মহামারির মধ্যে আন-অফিশিয়াল সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বিদেশসচিব।’
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে শ্রিংলা বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।
শ্রিংলার এই ঢাকা সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদীর জমানায় বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের। গত বছরে নাগরিকত্ব আইন বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতাদের মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। এখন লাদাখে চীন-ভারত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আর পুরনো সুসম্পর্কের জেরে বাংলাদেশের উপরে ক্রমাগত প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে চীন। ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মরসুমে তিস্তার জলস্তর ধরে রাখার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। করোনার সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে চালানোর ছাড়পত্রও চীন পেয়েছে।
এদিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি হাসিনাকে ফোন করে করোনা ও বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ঢাকার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় ইসলামাবাদ।
আনন্দবাজার আরও লিখেছে, রামমন্দিরের শিলান্যাস ঘিরেও ঘরোয়াভাবে কট্টরপন্থীদের সামনে হাসিনার সরকার অস্বস্তিতে পড়ছে বলে অনেকের মত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেন সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা ঐতিহাসিক। এটাকে (মন্দির নির্মাণ) সেই সম্পর্কে আঘাত হানতে দেব না। তা-ও ভারতের কাছে অনুরোধ, এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না, যা দু’দেশের সুন্দর ও গভীর সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে।’
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আজকাল লিখেছে, বাংলাদেশে বিমানবন্দর তৈরিতে সহযোগিতার কথা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। এবার তিস্তার ওপর সেচ প্রকল্পেও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য করছে চীন। এরপর আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনি দিল্লি। মঙ্গলবারই ঢাকায় গেলেন ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
ভারতের বাংলা দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। দু’দেশের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন ও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও পোক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সার্বিক বিষয় নিয়ে আগামীকাল বুধবার বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ ও ভারতের বিদেশ সচিব।’
ইকোনোমিক টাইমস জানিয়েছে, ঢাকা সফররত পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, এরপর যেতে পারেন মিয়ানমারে। পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে এই সফর করছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে গেছেন তিনি। এরপর মিয়ানমার সফরে গিয়ে নভেম্বরের নির্বাচনের আগে দেশটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত পারস্পারিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে ঢাকা সফর করছেন শ্রিংলা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি শ্রিংলার দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে গত মার্চে তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
দ্য হিন্দু সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শ্রিংলার সফরে বিশেষ আতিথেয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত চার মাসে করোনার কারণে শেখ হাসিনা কোনো বিদেশি অতিথির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। শ্রিংলার সঙ্গের চার মাস পর প্রথম সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে দুই দেশের সঙ্গে দুই বছরের পারস্পারিক সম্পর্কের ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।