বৃষ্টি অব্যাহত, জোয়ারের পানিতে উপকূলজুড়ে ভোগান্তি

মত ও পথ প্রতিবেদক

পানিবন্দি মানুষ
ফাইল ছবি

গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত আজ রবিবারও অব্যাহত আছে। বৃষ্টির এই ধারা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও অমাব্যসার কারণে জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা।

রবিবার ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের ১৯টি অঞ্চলের নদীবন্দরে আজ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। এসব অঞ্চলে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের নদীবন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

গতকাল এক পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ু ও ভারী বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে চার ফুট পর্যন্ত উচ্চতার বায়ুতাড়িত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে। গতকাল বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ভারতের মধ্যপ্রদেশের মধ্যভাগ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশের উত্তর পশ্চিমভাগ ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। গত তিন-চারদিন ধরে চলমান অমাবস্যার জোয়ারে ঘরবন্দি দুর্বিষহ জীবন কাটছে উপকূলবাসীর। মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণে জোয়ারে প্রতিদিন বাড়ছে পানির উচ্চতা। এতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।

সরকারি সংস্থা এফএফডব্লিউসির শনিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উপকূলীয় আট জেলার ১২ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সংস্থাটি ১৪ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করে বলেছে, এর মধ্যে অন্তত ছয় স্থানের পানিপ্রবাহ ঘূর্ণিঝড় আম্পান সময়কালের চেয়ে বেশি।

বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই দেশে বন্যা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরই সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। একাধিক ঘূর্ণিঝড়ও হয়েছে কোনো কোনো বছর। এছাড়া অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ হয়েছে প্রায় প্রতিবছর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এসব ঘটনাই সেই শঙ্কার কথাই মনে করিয়ে দেয়। এ কথায় বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান। সামনের দিনগুলোয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও তীব্র, ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে