কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে মা মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়।
অপর দুইজন সদস্য হলেন- চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানবীর হোসেন ও চকরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটিপ্রধান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়। তিনি জানান, ২৪ আগস্ট বিকাল ৩টায় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তদন্ত টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈয়দ শামশুল তাবরীজ জানিয়েছেন, তিনিও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।
এ ঘটনায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব একটি সুয়োমোটো আদেশ দিয়েছেন চকরিয়ার এএসপি সার্কেল কাজী মো. মতিউল ইসলামকে। তাকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে করতে বলা হয়েছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে এই গরু চুরির ঘটনা ঘটে এবং সিএনজিতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। এ সময় পুলিশ ধৃতদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে চোরাইকৃত গরু, স্প্রের বোতল, ছোরা, স্কচটেপ, মোবাইল, গাড়ির চাবি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গরু চোরদের আটক করে স্থানীয় অতি উৎসাহী জনতা কর্তৃক পেটানো এবং রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটানোর খবর পাওয়ার পর হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিরানুল হক গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসেন। এর পর হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পিটুনিতে আহত পাঁচজনকেই পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। এর পর গরুর মালিক তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করলে পুলিশ সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন।
স্থানীয়রা জানান, অতি উৎসাহী জনতা দুই নারী মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে জড়িয়ে বেশ অপপ্রচার চলছে।
এ প্রসঙ্গে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, যখন গরু চুরির ঘটনা ঘটে তখন তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রামের কলাউজানে। অবশ্য ঘটনার খবর পেয়ে গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। এর পর পরিষদ থেকে মাত্র ২০ গজের মধ্যে থাকা হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকেও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্যে।’
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পারসিত চাকমা বলেন, ‘খবর পেয়ে তিন নারী ও দুই পুরুষকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে জব্দ করা হয় একটি স্প্রের বোতল, বাট ছাড়া একটি ছোরা, একটি কালো স্কচটেপ, একটি মোবাইল ও গাড়ির চাবি।’
ভাইরাল হওয়া একটি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার শিকার নারী পারভীন ও এক পুরুষ সদস্য স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাবলিকই তাদেরকে পিটিয়েছেন এবং কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় ঘুরিয়েছেন।
চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গরুর বাছুর চুরি করে সিএনজি অটোয় তুলে পালানোর ঘটনা স্বীকার করেছেন। গরু চুরির বিষয়টি যেমন অপরাধ, তেমনি কাউকে এভাবে রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানোটাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাই অতি উৎসাহী কারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’