করোনার কারণে সব ধরনের নিয়মিত ঋণ খেলাপি করা বন্ধ রয়েছে। তারপরও চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
গত ৩০ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অনুমোদন করেছেন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের স্থিতির পরিমাণ ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। সে হিসেবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
এদিকে করোনার কারণে গত জানুয়ারি থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ঋণ নিয়মিত ছিল সেগুলোকে নতুন করে খেলাপি না করার নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ নির্দেশনা বহাল থাকবে। তারপরও ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
সূত্র জানায়, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণের বিপরীতে ওই নির্দেশ বহাল রয়েছে। তবে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ বহাল নেই। আলোচ্য সময়ে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বেশি পরিমাণে খেলাপি হয়েছে।
যে কারণে এর পরিমাণ বেড়েছে। এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সামান্য কমে ছিল।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মত ও পথকে বলেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে আছে। এরপর করোনা উপলক্ষে বাকি ঋণ যেন খেলাপি না করা হয় সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে একাধিকবার।
তবুও যখন খেলাপি ঋণ কমছে না, তখন খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখার দরকার নেই। সব প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির আগে ত্রি-পক্ষীয় একটি বৈঠক হয়।
সে বৈঠক শেষে প্রতি বছরই মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এবার করোনার কারণে ওই বৈঠক বিলম্বে হয়েছে। এর প্রভাব এবার জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের ওপর পড়েছে।
সে কারণে জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঘোষণা করতে বৈঠকের প্রয়োজন হয় কেন।
খেলাপি তো নির্ধারিত নিয়মেই হয়ে যাওয়ার কথা। যাই হোক বৈঠক বিলম্বের কারণে কিছু ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান যে ঋণ খেলাপি তা দেরিতে প্রকাশ হলো- অসুবিধা নেই। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এর আড়ালে আরও কত খেলাপি ঋণ লুকিয়ে আছে।
এ ধরনের খেলাপি ব্যক্তি নতুন করে যেন ঋণ না পায় সেদিকে ব্যাংকগুলোকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে এসব ঋণখেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতির গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এটা কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, যখন চাদরের নিচে লুকায়িত সব খারাপ ঋণ বের করা হবে। পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তখন বোঝা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মত ও পথকে বলেন, ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক বিলম্বে হওয়ায় মার্চের খেলাপি ঋণ বেড়েছে জুনে। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে আর বাড়বে না। হয়তো কিছুটা কমতে পারে।