১৯৮৬ সালে ফুটবলে ৩০ জন এবং হকিতে ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে জিরানী নামক স্থানে ১১৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিকেএসপি এখন দেশের খেলাধুলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৩৪ বছরে বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে বিকেএসপি। তৈরি হয়েছে আরো ৫টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ফুটবল ও হকি থেকে এখন ডিসিপ্লিন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। সর্বশেষ সংযোজন হলো আরও তিনটি খেলা। ভারোত্তোলন, হ্যান্ডবল এবং স্কোয়াশ।
গত ৯ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিকেএসপির পরিচালনা বোর্ডের ৩৩তম সভায় এই নতুন তিনটি বিভাগ অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ৩২তম বোর্ড সভায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল গলফ, কাবাডি ও ব্যাডমিন্টন।
প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ১৯৮৭ সালে ফুটবল ও হকির সঙ্গে যোগ হয় অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, ক্রিকেট ও টেনিস বিভাগ। ৬টা থেকে ডিসিপ্লিন ৭টা হয় ১৯৯১ সালে জিমন্যাস্টিক্স অন্তর্ভূক্ত হলে। ১৯৯৪ সালে অন্তর্ভূক্ত হয় বক্সিং, ১৯৯৭ সালে বাস্কেটবল, ২০০০ সালে শ্যুটিং, ২০০৯ সালে আরচারি ও জুডো, ২০১২ সালে কারাতে, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ানদো, ভলিবল ও উশু। ২০১৯ সালে গলফ, কাবাডি ও ব্যাডমিন্টন এবং সর্বশেষ এ বছর ভারোত্তোলন, হ্যান্ডবল ও স্কোয়াশ অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বিকেএসপিতে।
দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন বাড়ছে প্রতিবছর। ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন মিলে সংখ্যাটা এখন ৫৪। ফেডারেশনের সংখ্যার মতো বিকেএসপিতে বাড়ানো হচ্ছে ডিসিপ্লিনের সংখ্যাও।
যেভাবে ডিসিপ্লিন বাড়ছে, সেভাবে সুযোগ সুবিধা না বাড়ায় অনেকের মতে বোঝা চাপছে বিকেএসপিতে। সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে এভাবে ডিসিপ্লিন বাড়ানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এতে কর্তৃপক্ষ বাহবা পেলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বরিশালে আছে ৪ ডিসিপ্লিন ফুটবল, তায়কোয়ানদো, উশু ও কারাতে। চট্টগ্রামে শুধু ক্রিকেট, দিনাজপুরে ক্রিকেট ও সাঁতার, খুলনায় ফুটবল ও ক্রিকেট এবং সিলেটে শুধু ফুটবল।
ডিসিপ্লিন বাড়ানোর পাশপাশি বিকেএসপির আরো তিনটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে কক্সবাজারের রামুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি সহসাই খুলে দেয়া হবে। করোনা ভাইরাস আঘাত না হানলে হয়তো এতদিন উদ্বোধন হয়ে যেতো বিকেএসপির ষষ্ঠ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি।
বাকি দুটি হবে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে। রাজশাহীর পবায় প্রায় ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এরপর প্রকল্প তৈরি করা হবে ময়মনসিংহে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।
কেবল সব বিভাগেই নয়, প্রতিটি জেলায় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির ঘোষণাও দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
কেন্দ্রীয় বিকেএসপির ওপর থেকে চাপ কমাতেই আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে সরকারের। তবে যে হারে ডিসিপ্লিন বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাই প্রতিবছর চাপ বাড়ছে বিকেএসপির ওপর। দ্রুত পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধাসহ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়ানো না গেলে ডিসিপ্লিনগুলো বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে কেন্দ্রীয় বিকেএসপির জন্য।