ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে টাকার লেনদেনের রাগেই ভাগ্নে-ভাগ্নিকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর লাশ খাটের নিচে রেখে দেয় মামা বাদল মিয়া। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে বাদল মিয়া হত্যার কথা স্বীকার করে।
বুধবার ঢাকার সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে মামা বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করে বাঞ্ছারামপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাদল বাহরাইন থাকাকালে দোকান করার জন্য তার ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ায় কামাল উদ্দিনের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তার। সপ্তাহখানেক আগে বাদলকে এজন্য থাপ্পড়ও মারেন কামাল উদ্দিন। সেই রাগে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে বাদল।
সোমবার তার কক্ষে গেলে দরজা বন্ধ করে উচ্চশব্দে স্পিকার বাজিয়ে ভাগ্নে কামরুলের হাত-পা বেঁধে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বাদল। পরে লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। ভাগ্নি শিপা ঝাড়ু দিতে গিয়ে তা দেখে ফেললে তাকেও মারতে জোরাজুরি করে বাদল। পরে এক ধাক্কা মেরে ওয়াশরুমে নিয়ে তাকেও গলা কেটে হত্যা করে লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়।
বাদল কুমিল্লার হোমনা উপজেলার খুদাদাউদপুর গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে। সে বাহরাইন থেকে লকডাউনের আগে দেশে আসে। দেশে আসার পর হোমনায় একটি মামলার আসামি হয়ে গত ১৫ দিন আগে বাঞ্ছারামপুরে বোনের বাড়িতে আসে। ঘটনার পর থেকেই বাদল পলাতক ছিল।
গত সোমবার রাতে সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে খাটের নিচ থেকে শিপা আক্তার (১৪) ও তার ভাই কামরুল হাসানের (১০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিপা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ও কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
শিপা ও কামরুলের পিতা কামাল উদ্দিন ৫ মাস আগে সৌদি থেকে দেশে আসেন।
পুলিশ জানায়, ওই দিন বিকালে কামরুল নিখোঁজ হয়। তাকে খুঁজতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিপাকে ঘরে রেখে যান তার মা হাসিনা আক্তার। পরে ঘরে এসে দেখেন শিপাও নেই। নিখোঁজ দুজনের খোঁজ পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং রাত সাড়ে ৮টায় থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তাদের বাবা-মাসহ স্বজনরা।
এ ঘটনায় বাদলকে আসামি করে দুই সন্তান হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মা হাসিনা আক্তার।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটি খুবই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। দুই ভাগ্নে-ভাগ্নিকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক মামা।
নিহতদের মা হাসিনা আক্তার বলেন, এমন খুনি ভাইয়ের ফাঁসি চাই আমি। কেউ যেন আর ভাইকে বিশ্বাস না করে। বাদল আমার স্বামীর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বাকি টাকা চাওয়াতেই এ কাণ্ড করেছে সে।