ই-ভ্যালিসহ ই-বাণিজ্যকে নিয়মের মধ্যে আনতে চায় মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-ভ্যালি
ই-ভ্যালি

দেশে ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ই-ভ্যালিসহ ই-বাণিজ্যকে নিয়মের মধ্যে আনতে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ই-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োমের মধ্যে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য করার তাগিদ দেন। ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে গিয়ে যেন কোনো ভোক্তা প্রতারিত না হয় এদিকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও ‘ই-বাণিজ্য করবো নিজের ব্যবসা গড়বো’ প্রকল্প পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ই-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করুক এটাই চায় সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-ভ্যালির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে এফটিএ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে।

পণ্য কিনলেই অর্থ ফেরতের অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেয়া হচ্ছে। একের পর এক চটকদার অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে অল্পসংখ্যক গ্রাহক লাভবান হলেও বেশির ভাগই হচ্ছেন প্রতারিত।

এ ধরনের ব্যবসায়িক পলিসি বাজারে ব্যবসার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে একচেটিয়া (মনোপলি) অবস্থার সৃষ্টি করছে ই-ভ্যালি, যা আইনের বরখেলাপ বলে মনে করছে প্রতিযোগিতা কমিশন। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর চিঠি ইস্যু করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন।

প্রতিযোগিতা কমিশন চিঠিতে বলেছে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-ভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার সম্প্রতি নজরে আসে। এ অফারে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে, যার পরিমাণ ৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। সাধারণত এ ধরনের অফার ভোক্তাকে কম মূল্যে পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু এ অফারের শর্তাবলির ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ‘ঈদ ধামাকা ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ই-ভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে, পেমেন্ট করার তিন দিন পর। এই ক্যাশব্যাক পরবর্তী সময়ে ই-ভ্যালিতে যেকোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রোডাক্টের ৬০ শতাংশ ব্যালেন্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে।’

প্রতিযোগিতা কমিশন মনে করে, ই-ভ্যালির অফারের ৪ নম্বর শর্তের কারণে এটি প্রচলিত ডিসকাউন্ট/ক্যাশব্যাক/লয়ালটি রিবেট না হয়ে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৫ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী শর্তযুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপযুক্ত শর্ত থেকে প্রতীয়মান হয়, ই-ভ্যালির ক্যাশব্যাক অফারের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা বিস্তারের কারণ ঘটছে বা বাজারে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কিছু তথ্যাদি পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে প্রদানের জন্য তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ই-ভ্যালির কাছে প্রতিযোগিতা কমিশন ই-ভ্যালি সম্পর্কিত তথ্যাদি (কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ), ই-ভ্যালির বার্ষিক টার্নওভার ও আয়-ব্যয়ের তথ্য (বিগত তিন বছরের অথবা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত), ই-ভ্যালির আওতাভুক্ত পণ্যসমূহের বিবরণ, ই-ভ্যালির পণ্যের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ {বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বহির্বিশ্বে (যদি থাকে)}, ই-ভ্যালির মাধ্যমে যেসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের তালিকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি ও শর্তাবলি, ৮০-১৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছে তার তথ্য, ই-ভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের সঙ্গে অন্যান্য অফারের পার্থক্য কী (বিস্তারিত বিবরণসহ), ঈদ ধামাকা অফার সময়ের আগের তিন মাসের বিক্রি, আয় ও মুনাফার সঙ্গে অফার চলাকালীন বিক্রি, আয় ও মুনাফার তুলনামূলক বিবরণী।

এদিকে ই-ভ্যালির প্রতারণা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক তাদের কার্ডে ই-ভ্যালির পণ্য কেনাকাটা স্থগিত করেছে। বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক ও দি সিটি ব্যাংক এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের কার্ডে লেনদেন সাময়িক স্থগিত করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানই তাদের গ্রাহকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত কার্ডের মাধ্যমে ই-ভ্যালির পণ্য কেনার ক্ষেত্রে চলমান ডিসকাউন্ট সুবিধা বন্ধ থাকবে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে