এনআইডি জালিয়াতি: ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা করবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী
ফাইল ছবি


করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার বহুল আলোচিত জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালককে মামলা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছ

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। সচিব বলেন, এছাড়া সাবরিনার দ্বিতীয় এনআইডি ব্লক করে দেয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায়, কার সুপারিশে তিনি দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন- আমাদের কেউ কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সহায়তা করেছেন কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

universel cardiac hospital

এ বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। এর পরও আমরা একটা চিঠি দিচ্ছি মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করার জন্য। আমরা অতীতেও অনেকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার কারণে মামলা দিয়েছি। কাউকেই ছাড় দেইনি। এ ঘটনায় জড়িতদেরও ছাড় দেয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, ডা. সাবরিনা ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় দ্বিতীয়বার ভোটার হন। একটিতে ভোটার হন সাবরিনা শারমিন হোসেন নাম দিয়ে। জন্মতারিখ ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর। অন্যটিতে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর। দুটি আইডিতে বয়সের ফারাক পাঁচ বছর।

একটিতে স্বামীর নাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন আর. এইচ. হক। দ্বিতীয়টিতে স্বামীর নাম লেখা হয়েছে আরিফুল চৌধুরী। একটিতে বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন ও মায়ের নাম কিশোয়ার জেসমীন অপরটিতে মা-বাবার নাম পরিবর্তন করে সৈয়দ মুশাররফ হসেন ও জেসমিন হুসেন দিয়েছেন।

দুই এনআইডিতে দুই ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন তিনি। একটিতে মোহাম্মদপুরের পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটির ঠিকানা অন্যটিতে বাড্ডা এলাকার প্রগতি সরণির আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে করোনা কাণ্ডে গ্রেফতার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের এনআইডি স্থগিত করে ইসি। তিনি নিজের নাম সংশোধন করে ‘সাহেদ করিম’ থেকে হন ‘মোহাম্মদ সাহেদ’। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ কাজ করেন তিনি। বর্তমানে এর তদন্ত চলছে।

ভুয়া করোনার রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএমপি)। ২০ আগস্ট সাবরিনা ও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, করোনা জালিয়াতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন জেকেজির সাবরিনা ও তার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী। এ দুজন ছাড়াও মামলার অন্য ছয় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হলেন জেকেজির সমন্বয়ক সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম ও জেবুন্নেসা। মামলা থেকে মামুনুর রশীদ নামের আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলা করার ৪২ দিনের মাথায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

করোনার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজিহেলথ কেয়ারের কর্মচারী হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। পরদিন ২৪ জুন হুমায়ুন কবির ও তানজিনা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে হুমায়ুন কবির জেকেজি হেলথকেয়ারে চাকরি করার সময় কীভাবে করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। হুমায়ুন কবির জবানবন্দিতে বলেন, করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে ড্রেনে ফেলে দিতেন। এ ছাড়া শফিকুল ইসলামও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে