সুশান্তের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতাম : রিয়া

বিনোদন প্রতিবেদক

সুশান্ত-রিয়া
সুশান্ত-রিয়া। ফাইল ছবি

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলায় গোটা ভারত যার কাছ থেকে সত্য ঘটনা জানার জন্য উৎসুক, তিনি হলেন অভিনেতার চর্চিত প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। সেই রিয়া এবার প্রথম মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমে। তাকে ঘিরে জমতে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন ইন্ডিয়া টুডে’র সাক্ষাৎকারে।

রিয়া দাবি করেন, পরিচালক-প্রযোজক মহেশ ভাটের সঙ্গে সুশান্ত আর তার সম্পর্ক নিয়ে কোনো মেসেজ বিনিময় করেননি তিনি। সুশান্তকে ছাড়ার বিষয়ে মহেশ ভাট তাকে মদত দিয়েছিলেন এমনও না। রিয়া বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। সুশান্তকে ছেড়ে চলে আসার পরেও ও আমাকে ফিরাল না। ফোনও করেনি। খুব দুঃখ পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম আমি অসুস্থ বলে সুশান্ত আর আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। এত খারাপ লেগেছিল যে ভাট সাবকে ফোন করি।

সুশান্তের ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে রিয়ার ওপরে। এ ব্যাপারে নায়িকা বলেন, ‘গাড়ির চালক আমি তাড়াইনি। আমি ভাবতেই পারিনি সিদ্ধার্থ আমার সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে এমন কথা বলতে পারে! আমাকে নিয়ে অবশ্য এখন যে যা পারছে বলছে, লিখছে। তবে আমি কোনো ড্রাইভার বদলাইনি, কাউকে আনিওনি। আমি চলে আসার পর সুশান্তের দিদি ড্রাইভার বদল করে।

সুশান্তের কোম্পানি নিয়ে রিয়া এবং তার ভাই শৌভিকের ভূমিকা ঘিরে নানা গুজব ছড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর বক্তব্য, ‘শৌভিককে খুবই ভালোবাসতো সুশান্ত। এ জন্য আমি ওকে আমার সতিন বলতাম। সুশান্তের জেদেই আমাদের ইতালি ট্রিপে শৌভিককে নেয়া হয়েছিল। পরে সুশান্ত আমাদের দুজনকে ওর ড্রিম প্রজেক্টে যুক্ত করে। এই কোম্পানির জন্য আমরা দুজনও সমান টাকা সুশান্তকে দেই। এরপর আমরা তিনজন মিলে রিলেটিক্স নামের সংস্থাটি শুরু করি। তিনজনেরই এতে ৩৩.৩৩ শতাংশ টাকা দিতে হয়েছিল। আমার ভাইয়ের চাকরি ছিল না বলেই ওর টাকা আমি ওর ব্যাংকে ট্রান্সফার করি। সুশান্তের কোম্পানি সংক্রান্ত শুধু এই লেনদেন হয়েছে আমাদের। বাকি সব মিথ্যা।’

সুশান্তের সঙ্গে ইউরোপ ট্রিপ সম্পর্কে রিয়া বলেন, ‘আমার আর সুশান্তের ইউরোপ ট্রিপ নিয়ে যা খুশি তাই বলা হচ্ছে। সুশান্তের সব টাকা যেন আমিই নষ্ট করেছি। সুশান্ত হাই লিভিং-এ বিশ্বাস করতো। আমার প্যারিসে যাওয়ার কথা ছিল ফ্যাশন শুটের জন্য। ওরা আমাকে যাতায়াত আর থাকার খরচ সব দিয়েছিল। সুশান্ত সেসব বাতিল করে বিজনেস ক্লাসে টিকিট কাটে। ইউরোপ ট্রিপ প্ল্যান করে। বড় হোটেলের খরচ ও-ই দেয়। আমিও নিয়েছি। কেউ কেন বলবে আমি ওর টাকায় চলেছি? বরং বলব, এটা ওর সিদ্ধান্ত! আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতাম। সুশান্ত ভালোবাসা থেকেই সব খরচ করত।’

রিয়া তার স্মৃতি থেকে বলেন, ‘শুধু তার সঙ্গেই নয়, বেশ অনেক দিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে থাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়ে ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন সুশান্ত। প্রাইভেট জেট নিয়ে গিয়েছিলেন। রিয়া পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কার কী বলার আছে বলুন তো, সুশান্ত নিজের পয়সায় কীভাবে জীবন চালাবে? ওর থাইল্যান্ড ট্রিপ নিয়েও কি বলা হবে, যে ওর বন্ধুরা জোর করে ওর টাকা নিয়েছিল? তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেন বলা হচ্ছে?’

রিয়া বলেন, ইউরোপ ট্রিপে গিয়ে জানতে পারি সুশান্ত মানসিকভাবে অসুস্থ। আমরা যখন ইউরোপে বেড়াতে যাচ্ছিলাম তখন সুশান্ত বলেছিল যে ও ফ্লাইটে বসে থাকতে ভয় পায়। তার জন্যও একটি ওষুধ নিয়েছিল। যার নাম ‘মোডাফিনিল’। ফ্লাইটে চড়ার আগে সুশান্ত সেই ওষুধ খায়৷ ওষুধটা সুশান্তের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকত। আমরা প্যারিসে পৌঁছানোর পর সুশান্ত তিন দিন ঘর থেকে বাইরে আসেনি। এতে আমার কিছুটা মন খারাপ হয়৷ কারণ আমি এই ট্রিপ নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলাম। আমি চেয়েছিলাম ঘুরে বেড়াতে৷ আর ওখানে সুশান্ত নিশ্চিন্তে রাস্তায় ঘুরতে পারত, কোনো সমস্যাও হতো না।’

তবে সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে সুশান্ত খুশি ছিলেন বলে জানান রিয়া। রিয়া বলেন, ইটালিতে পৌঁছে দেখতে পাই ঘরের কাঠামো অদ্ভুত ধরনের! তাতে আমি ভয় পেলেও সুশান্ত বলে সব ঠিক আছে। তারপর সুশান্ত অবশ্য বলে যে ঘরে কোনো সমস্যা রয়েছে এবং তখন থেকেই সুশান্তের অবস্থা বদলে যায়। ঘর ছেড়ে যেতে চায় না। ২০১৩ সালে এসব ঘটে। তারপর থেকে শুরু হয় হতাশা৷ যোগাযোগ করা হয় মনোবিজ্ঞানী হরেশ শেঠির সঙ্গে৷ তিনিই বলেন ওষুধের কথা।’

সন্দীপ সিং আর রিয়া চক্রবর্তীর যোগসাজশ নিয়ে যে তথ্য চারিদিকে ছড়িয়েছে সেই প্রসঙ্গে রিয়া বলেন, ‘আমি এই নামে কাউকে চিনি না। সুশান্তের এত বন্ধু অথচ তাকে বাড়িতে দেখলাম না, ফোন করতেও না। অদ্ভুত!’ সুশান্তের মরদেহে হাত দিয়ে ‘সরি বাবু’ বলা নিয়েও নানা গুঞ্জন ওঠেছিল। সে প্রসঙ্গে রিয়া বলেন, ‘ওর মৃত্যুর খবর এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি। প্রথমে চুপ করেছিলাম। কান্না পাচ্ছিল। কিছুই করে উঠতে পারিনি। পরে যখন ওর শেষকৃত্যে যেতে চাইলাম তখন শুনলাম, ওর পরিবার আমার নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।’

নায়িকা বলেন, ‘এই জন্যই ওকে শেষবারের মতো দেখতে মর্গে গিয়েছিলাম। ওকে শেষবার প্রণাম করতে চেয়েছিলাম। একজন ভারতীয় জানে এই প্রণামের কী মানে! আমার ‘সরি বাবু’ বলা নিয়ে যে এত বিতর্ক, কী বা বলতে পারতাম? এত গুণী মানুষের এই পরিণতি? তার জন্য ‘সরি’। তার মৃত্যু তো প্রহসন হয়ে গেছে। সেই জন্য ‘সরি’। ওর মৃত্যু নিয়ে গল্প লেখা হচ্ছে। সেই জন্য ‘সরি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে