করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব ধরনের মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে ২০২২ সালেই কারিগরি শিক্ষা চালু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আজ সোমবার দুপুরে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইরাব) আয়োজনে ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা: এসডিজি অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের কারিগরি শিক্ষার হার আরো বৃদ্ধি পাবে। আমাদের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে। এগুলো হবে অত্যন্ত আধুনিক মানের। এ কারণে সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষাতেও আমরা কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে তুলছি। নবম দশম শ্রেণিতে অন্তত দুটি ট্রেড বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করেছিলাম ২০২১ সালে চালু করব। কিন্তু করোনার পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী না হলে আশা করছি ২০২২ সালে সবস্থানে চালু করতে পারব।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজন মানোন্নয়ন। আমাদের দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। সেই নিয়োগ দেবার বড় উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মানসম্মত ল্যাব, ইকুইপমেন্ট এগুলো থাকতে হবে, ইন্ডাস্ট্রিজ ও একাডেমির মধ্যে সংযুক্তি খুব জরুরি।
দীপু মনি বলেন, শর্ট কোর্স নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমাদের মডিউলার শিক্ষাতে যেতেই হবে। কারণ আজকে একটা ডিগ্রি করে কাজে যাবো। এরপর আমার কিন্তু বারবার ডিগ্রি করতে আসার সুযোগ নেই। কাজেই ডিগ্রির কোর্সটাকে ভেঙে ভেঙে মডিউল করতে হবে। যার যে মডিউল প্রয়োজন সেটাতে সে শিক্ষার্থী হবে।
তিনি আরও বলেন, যখন এমপিওভুক্তি করছি তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিচ্ছেন, এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করলে অনুমোদন নিয়ে স্থাপন করতে হবে। প্রায়শই দেখা যায়, যত্রতত্র যেকোনভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে ফেলেন। নানানভাবে চাপ প্রয়োগ করেন অনুমোদন দেয়া হোক। গত কয়েকবছর শর্তসাপেক্ষে বলা হচ্ছে, আর কেউ এমপিওভুক্তি চাইবে না। কিন্তু সকলেই এমপিও চায়। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তারপরেও যদি প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে থাকে তবে সরকারের একুমোলেটেড করার সাধ্য কতোটুকু আছে সেটাও বুজতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারিগরির অনেক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নাকি বলেন, তারা শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করছেন। আমি জানতে চাই তারা কোন শিক্ষক। আর কারিগরির শিক্ষকরা এটা কী করে বলেন? কারণ কারিগরির কোন শিক্ষার্থী বেকার থাকছে? তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বরং যারা অন্যান্য শিক্ষায় আছে তারা সনদধারী হয়েও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আমাদের এদিকেও মনোযোগ দিতে হবে, সবাইকে চাকরি খুঁজলে হবে না। উদ্যোক্তা হবে, অনেককেই নিজের কর্মসংস্থান নিজেকেই সৃষ্টি করতে হবে। কাজেই সেই মনোভাবটিও আমাদের গড়তে হবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন। ইতোমধ্যে কারিগরি শিক্ষায় বয়স উঠিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে সবাই শেখার সুযোগ পায়। এছাড়া মানসম্মত শিক্ষাটাও খুব দরকার। মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে সেটাকে যদি আমরা এভাবে সংজ্ঞায়িত করি যে শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ে। সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ে এবং নৈতিকভাবে আলোকিত হয়, সে ধরনের শিক্ষাই আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে। তাই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মূল বিষয় হলো এটা কর্মমুখী শিক্ষার কারণে এর মান উন্নয়নের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবছর ২৩-২৮ লাখ লোক শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী এই জনশক্তিকে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তুলতে হবে।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) সভাপতি মোসতাক আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ইরাবের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হকের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর মোরাদ হোসেন মোল্লা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম প্রমুখ।