সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় প্রাণ। প্রতিদিনই খবরের কাগজ, অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রাণ হারায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ এবং আহত হয়ে অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন মারা যান। কিন্তু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এ মৃত্যুর গড় ১৫-১৬ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী ৭৫৫ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪১ নারী ও ১৬৬ শিশুসহ মারা গেছেন ১,০২৭ জন। সেই সাথে আহত হয়েছেন ১,৩০১ জন। মার্চে ২৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২৭ জন এবং আহত ৯৮৬ জন। এপ্রিলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১১৯টি। নিহত ১৩৮ এবং আহত ১১২ জন। মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১৩টি। এতে মারা গেছেন ২৯২ জন এবং আহত হয়েছেন ২৬১ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারী ৩৯ জন, আর শিশু ২৪ এবং জুন মাসে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় মোট ৩৬৮ জন নিহত এবং ৫১৮ জন আহত হয়েছেন। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সড়কে নিহত হয়েছেন ২২৫২ জন।

বিশ্বব্যাংকের জরিপে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির ১ থেকে ২ শতাংশ। দেড় শতাংশ ধরলেও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা! তবে গুরুতর এই জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর ভূমিকা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্য যারা অঙ্গীকার করেছে যে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো কী পদক্ষেপ নিয়েছে—এসব বিষয় নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি।

গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
ফাইল ছবি

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ওভারটেকিং প্রবণতা। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সংকেত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় সংকেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে, যার ফলে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি বের হতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ওভারটেক করা উচিত। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা। মহাসড়কগুলোতে বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। রাস্তার পাশে হাট-বাজার স্থাপন এবং ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়, যার ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই চালকদের এ ব্যাপারে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।

আমরা মনে করি, সড়কে শৃংঙ্খলা ফেরাতে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ। সেইসঙ্গে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল—এসবও বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স দেওয়া হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা জরুরি। সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, সড়ক দুর্ঘটনা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা। সরকারের পাশাপাশি পরিবহনমালিক, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট হতে হবে; যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে