৪৩ বছরে বিএনপি

মত ও পথ প্রতিবেদক

বিএনপি
ফাইল ছবি

এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি তার প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে পা দিল। করোনাকালের পাশাপাশি এমন একটি সময় বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে, যখন দলটির চেয়ারপারসন পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে। কারাদণ্ড, মামলাগত সমস্যা এবং শারীরিক অবস্থা মিলে তিনি আদৌ রাজনীতিতে আর সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ দলটির নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরবেন কি না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও মাঠের আন্দোলন কিংবা নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে বিএনপির নেতারা জনগণকে সংগঠিত করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আশা দেখছেন। সবাইকে বিএনপির পতাকাতলে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এখনকার বিএনপি অন্য সময়ের তুলনায় বেশি শক্তিশালী- এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দীর্ঘ পথে বিএনপিকে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে। যতই নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হোক না কেন, বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাদামাটা আয়োজন

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খুব সাদামাটা আয়োজন করেছে বিএনপি। আজ সকালে দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ভার্চুয়াল আলোচনা সভা থাকছে তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে।

এ উপলক্ষে সারাদেশে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির শুরু থেকে বর্তমান

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান ও পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন।

১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি হন।

নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার এক বছরের মধ্যে রাজনীতিতে নেমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তখন বিএনপির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালে বিএনপিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। বিচারপতি সাত্তারের অসুস্থতার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পদ নিয়ে দলের হাল ধরেন খালেদা জিয়া। তারপর ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকে খালেদা জিয়া এই পদে রয়েছেন।

এরশাদের পতনের পর প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বিএনপি। মাঝখানে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরে ২০০১ সালে্র নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।

২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আর কোনো নির্বাচনে বিজয়ের মুখ দেখেনি দলটি।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা হলে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করে। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় ব্যক্তিগত চিকিৎ​সক ও পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। এই সময়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য নেতাদের সঙ্গে খুব একটা সাক্ষাৎ দেননি খালেদা জিয়া। গত ঈদের পরদিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

চলতি মাসের ২৪ তারিখ ছয় মাসের সাজা স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে খালেদা জিয়ার। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে সময় বাড়ানো এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে নেয়ার কথা বলে আবেদন করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আবেদন পাওয়ার পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

জানা গেছে, করোনার সময় মুক্তি পাওয়ায় ডায়াবেটিস, বাত ও চোখের সমস্যায় ভোগা ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া সেই অর্থে কোনো চিকিৎসা পাননি। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য এবারের আবেদনে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি শিথিলের অনুরোধ করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা রয়েছে।

বর্তমানে করোনার কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমও আপাতত বন্ধ রয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের পর আবার কাজ শুরু হবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘বিএনপি এখন অনেক গতিশীল হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে