কুরিয়ারে গাঁজার চালানের মিশন কুমিল্লা থেকে রাজশাহী। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর রেফারেন্সে কুমিল্লা থেকে আসবাবপত্রের ভেতরে লুকিয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহীতে পাঠানো হয় গাঁজার চালান। র্যাব কর্তৃক এই গাঁজার চালান আটকের খবরে মঙ্গলবার দিনভর এ নিয়ে কুমিল্লায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কুরিয়ার প্রাপক মুক্তল হোসেনসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তবে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা বিষয়টি জানতেন না।
এদিকে গাঁজা বুকিংয়ে মেয়রের মালিকানাধীন হোটেলের কর্মচারীরা জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সিটি মেয়র।
এর আগে শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার ধর্মপুর শাখার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মুক্তল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রাপক দেখিয়ে রাজশাহীতে বক্সখাট ও টেবিলসহ আসবাবপত্র প্রেরণ করা হয়। কুরিয়ারের রশিদে প্রেরকের স্থলে হুমায়ুন কবির এবং রেফারেন্স স্থলে মেয়র, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উল্লেখ করা হয়।
ধর্মপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, শুক্রবার রাত ৮টায় কিছু ফার্নিচার নিয়ে আসে হোটেল রেড রুফ ইনের হোটেলবয় মো. সোহেল এবং মুক্তল নামে এক ব্যক্তি। এগুলোর প্রেরকের ঘরে হুমায়ুন কবির এবং রাজশাহীতে প্রাপক হিসেবে মুক্তল হোসেনের নাম দেয়া হয়। পাঠানো হয় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা মোড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখায়। ফার্নিচারগুলোর ভাড়া বিল তৈরি এবং গ্রহণ করেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিংম্যান জসিম উদ্দিন।
বুকিংয়ের ডেলিভারি চার্জ আসে ১৩ হাজার টাকা। এ সময় রেড রুফ ইনের কর্মচারী সোহেলের সঙ্গে আসা মুক্তল হোসেন মেয়রের নাম ভাঙিয়ে তার রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন এবং বিল কমানোর জন্য চিৎকার করেন। তখন বুকিংম্যান জসিম উদ্দিন রেড রুফ ইন হোটেলের জিএম ও সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর মামাতো শ্যালক আরিফ তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলেন। তার অনুরোধে ১৩ হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে ভাড়া বাবদ আট হাজার টাকা বকেয়া রেখে বুকিং নিশ্চিত করেন।
এছাড়া ফারুক নামে ওই হোটেলের এক কর্মচারীও এসব মালামাল পৌঁছানোর বিষয়ে বুকিংম্যান জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আসবাবপত্রগুলো রাজশাহীতে পৌঁছলে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানা মোড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বক্সখাটের ভেতর থেকে গাঁজার প্যাকেটগুলো উদ্ধার করে র্যাব। এ সময় গাঁজাসহ পাঁছজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কুমিল্লায় আসবাবপত্রের ভেতের গাঁজার চালান বুকিং দিয়ে মুক্তল নামের ওই ব্যক্তি রাজশাহীতে যান এবং সেখানে চালান গ্রহণ করতে গিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতাররা হলেন- রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে দুলাল (৩০), তানোরের দেউরাতলা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (২৪), একই উপজেলার সেদায়ের এলাকার মৃত আফসার আলীর ছেলে বাদশা (৩২), সিধাইড় গ্রামের মেরাজ উদ্দিনের ছেলে সোহান আলী (২১), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার বেলতলী এলাকার সুলতান আহমেদের ছেলে মুক্তল হোসেন (৩২) এবং একই থানার মাদলা এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে বাপ্পি (৩০)।
এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম অপু আরও বলেন, কার্টন ও ব্যাগসহ সবসময় বুকিংয়ের সময় অন্যান্য আসবাবপত্র খুলে পরীক্ষা করা হলেও ওই দিন ফার্নিচার হওয়ায় তা চেক করা সম্ভব হয়নি। কারণ বক্সখাটের মাথার পাশের বক্সটিতে পেরেক মারা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি ওই বক্সের ভেতর ৫১ কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজা ছিল।
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে ফার্নিচারগুলো নিয়ে যাওয়া ব্যক্তি রেড রুফ ইনের হোটেল বয় সোহেল বলেন, হুমায়ুন কবির নামে আমাদের এক কাস্টমার মোবাইল ফোনে মুক্তলকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মুক্তলের সঙ্গে ফার্নিচারগুলো সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে দিয়ে আসার জন্য বলেন হুমায়ুন। তখন এগুলো নিয়ে কুমিল্লার ধর্মপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে যাই। কিন্তু ফার্নিচারের ভেতরে গাঁজা রয়েছে আমার জানা ছিল না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার নাম কিভাবে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। এক্ষেত্রে আমার নাম ব্যবহার করে কেউ অন্যায় কাজে জড়িত থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
রেড রুফ ইনের হোটেল কর্মচারী সোহেল ও ফারুক বর্তমানে হোটেলে কর্মরত আছে। তবে জিএম আরিফ তালুকদার করোনা পজিটিভ হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ছুটিতে বাড়িতে রয়েছে। নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় অবস্থিত নিসা টাওয়ার এবং হোটেল রেড রুফ ইন সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান।