বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই আওয়ামী লীগের চিন্তা ও কাজ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ কীভাবে একটু ভালো থাকবে সেটাই আমাদের করতে হবে। এজন্য দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা আছেন। সেখানে কোথায় কী প্রয়োজন, কী করলে দেশের মানুষ একটু ভালো থাকবে। আমাদের মানুষকে নিয়েই চিন্তা, মানুষকে নিয়েই আমাদের কাজ। সেটাই আমাদের করতে হবে। আমি আশাকরি সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে সেই কাজ করবে। আমাদের জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অমরা পূরণ করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি, যদিও যে কর্মসূচিগুলো নিয়েছিলাম তা পালন করতে পারছি না করোনাভাইরাসের কারণে। যদিও আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, আমরা গাছ লাগাব প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায়। আর দেশের মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াব। যাতে গৃহহারা, ভূমিহীন- বিশেষ করে ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহ আমরা নির্মাণ করে দেব। সেগুলো আমাদের প্রত্যেক অঞ্চলে, এরকম যদি থাকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে, দেখতে হবে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। তাছাড়া যাদের ভিটে আছে কিন্তু বাড়ি করার টাকা নেই তাদেরও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এটাও যাতে যথাযথভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রত্যেকে যার যার নিজ নিজ বিষয়ভিত্তিক দায়িত্বটা পালন করা দরকার। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে ঘোষণাগুলো দিয়েছি- পাশাপাশি আমাদের যে পলিসিগুলো রয়েছে, সেগুলো হতে শুরু করে সব বিষয়গুলো নিয়ে বসা, অলোচনা করা। জাতির কাছে আমাদের দেয়া কী কী প্রতিশ্রুতি এ পর্যন্ত আমরা রক্ষা করতে পেরেছি বা কোনটা কতটুকু করা হয়েছে বা ভবিষ্যতে কতটুকু করব সেই বিষয় আলোচনা করা।
করোনাভাইরাস চলাকালীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগে ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান দলীয় সভাপতি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ত্রাণ দেয়া। ধান কাটার সময় ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দেয়া। বন্যার সময় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো- এ ধরনের কাজ আমাদের সবাই করেছে। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আর এটিই হচ্ছে আমাদের কাজ, জাতির পিতা সেই শিক্ষাটাই আমাদের দিয়েছিলেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হল আমাদের যে কোনো দুঃসময়ে তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। আমি এইটুকু অন্তত বলতে পারি- পঁচাত্তরের পর আমরা যখন দিল্লিতে ছিলাম তখন তিনি (প্রণব মুখার্জি) ও তার পরিবার আমাদের দেখাশোনা, সব বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর পরবর্তীতেও বিভিন্ন দুঃসময়ে সবসময় তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ করে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যখন বিশ্ব ব্যাংক লাগল, ওয়ান-ইলেভেনে যখন আমি গ্রেফতার হলাম। আমার প্রতি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সময়ও তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের পক্ষে ও আমার মুক্তির জন্য অনেক কাজ করে গেছেন।
সেক্ষেত্রে ভারতের সরকার ও প্রণব মুখার্জি নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাছাড়া ১/১১ সময়ে যখন আমি বন্দিখানায় তখনও সবসময় খোঁজ-খবর নেয়া। পদ্মা সেতুর বিষয়েও তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে আমরা সবসময় পাশে পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানেও তার ভূমিকা ছিল, আমাদের শরণার্থীদের রাখা; আবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার অবস্থান শুধু ভারতে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার একটা অবস্থান ছিল। আমাদের পাশে তিনি সবসময়ই ছিলেন। তিনি একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, লেখাপড়া জানতেন।
এর আগে ভার্চুয়াল আলোচনার শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের সভাপতির একটা গাইডলাইন চাই। আমরা নিজেরা কিছু বিষয় আলোচনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে- আমাদের যে সব জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে। তাদের আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে আপনার অফিসে (সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমণ্ডি) পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আরেকটি হল এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সম্পাদককে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট উপকমিটি গঠনের রিকমন্ডেশন তৈরি করেছি, সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক আপনি।
তিনি বলেন, আর আমরা সীমিত আকারে সাংগঠনিক কর্মসূচি এখন থেকে পালন করার জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পালন করার জন্য একটি নির্দেশনা দিচ্ছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আপনার জন্মদিন। এটা আমরা খুব সীমিত আকারে পালন করব। এটা প্রতিবছরই করে থাকি। আপনি না বললেও করব।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি না। বাকিগুলোর মধ্যে সাব-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এটা করা উচিত। যাতে সাব-কমিটিগুলো বসতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার করা, আলোচনা করা। আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যত কর্মসূচি সেগুলো ঠিক করা। সাব-কমিটিগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।