দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। পৃথক পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
চারজনের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি আসাদুল হককে শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্তের চুড়িপট্টি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার ৪ নং ঘোড়াঘাট ইউপি’র সাগরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন।
গ্রেপ্তার অন্য তিনজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও মাসুদ রানাকে ঘোড়াঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীর ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা। ঘোড়াঘাট কাছিগাড়ি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেবিপুর গ্রামের আদু মিয়ার ছেলে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দিনাজপুর ডিবি গোয়েন্দা পুলিশ ইউএনও’র বাসভবনের নৈশপ্রহরী পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম দুজনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অন্য দুইজনের ব্যাপারে জানাতে পারেননি। তিনি আসাদুল ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে দিনাজপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফর ইউএনওর বাড়িতে হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নৈশপ্রহরী পলাশকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্য একটি সূত্র মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাব-১৩ এর এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কোনো ক্লু পাওয়া গেলে গণমাধ্যমের সামনে তাদের হাজির করা হবে।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় তার ভাই ফরিদ শেখ ঘোড়াঘাট থানায় গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি মামলা করেছেন। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ নেই বলে জানান ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘোড়াঘাট ইউএনওর বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলায় অংশ নেয় দু’জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মুখোশ ও অন্যজন পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরা। যাতে তাদের চেনা না যায়। পাতলা হালকা গরনের দু’জন রাতে তারা এক এক করে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ঘটনার পর একই সঙ্গে বের হয়ে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এমন কথা নিশ্চিত করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া ও পুলিশের রংপুর জোনের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এর আগেও একই কথা জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা। সেই সিসি ফুটেজ ধরেই এগোচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন হামলায় আহত ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ। দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়ে তিনিও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ওমর আলী জানিয়েছেন, বাসায় ঢুকে হামলাকারীরা বারবার ওয়াহিদা খানমের কাছে আলমারির চাবি চেয়েছে। চাবি না দিলে তার চার বছরের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় একজন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হামলার ঘটনা তুলে ধরেন ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ।
গত বুধবার গভীর রাতে সরকারি বাসভবনে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন ঘোড়াঘাট থানার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও তার বাবা চিকিৎসাধীন আছেন রংপুরে।