২০১৬ সালে যেভাবে সাইবার হামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করা হয়েছিল, সেইভাবে আবার সাইবার হামলা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ এই হামলা চালাতে পারে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে অনেক ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং সেবা সীমিত করেছে। কোনো ব্যাংক অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে দিচ্ছে না। অনলাইন লেনদেন সীমিত করা হয়েছে। এটিএম বুথগুলোয়ও বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব কর্মীদের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও এ ব্যাপারে নজরদারি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আর্থিক খাতের অনলাইন সিস্টেমে চিহ্নিত ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটি অকেজো করতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে দেশের আর্থিক খাতের অনলাইন সিস্টেমে একটি ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার বা ভাইরাসের সন্ধান পায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। সঙ্গে সঙ্গে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে ওঠে। অনলাইন লেনদেন সীমিত করা হয়। একইসঙ্গে আরোপ করা হয় বাড়তি সতর্কতা, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অনেক ব্যাংকের এটিএম বুথে নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কার্ডের লেনদেনেও সতর্কতা অনুসরণ করা হচ্ছে। আগে এটিএম বুথগুলো সারা রাত খোলা থাকত। এখন জনবহুল এলাকায় খোলা রাখা হচ্ছে রাত ১১টা পর্যন্ত। গ্রামে রাত ৮টার পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সতর্কতা তুলে না নেয়া পর্যন্ত এসব ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের মাধ্যমে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড-এর নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছিল। ম্যালওয়্যার হচ্ছে এমন একটি গোপন সফটওয়্যার যা কোনো মেইল বা বার্তার মাধ্যমে যে কোনো একটি অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশ করে এর সব ধরনের অতি গোপনীয় তথ্য কপি করে উৎসস্থলে বা প্রেরকের কাছে পাঠাতে পারে বা অন্যত্র সরিয়ে দিতে পারে। এগুলো ব্যবহার করে ম্যালওয়্যারের প্রেরক সিস্টেম হ্যাক করতে পারে। অর্থসহ অন্যান্য তথ্য চুরি করতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, ম্যালওয়্যারের সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় এখন ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। সফটওয়্যারটিকে অকেজো বা ক্লিন করতে হবে। এটি কীভাবে করা সম্ভব, সে বিষয়ে কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে দেয়া চিঠিতে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো কাজ করছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদেরও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি। ভাইরাসটি একেবারে ক্লিন না করা পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন করা যাবে না। শুধু লেনদেনই নয় সরকারি অন্যান্য তথ্য স্থানান্তরেও সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ম্যালওয়্যারের কার্যকারিতার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এ মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তবে এটির মেয়াদ কতদিন আছে সেটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সিস্টেম হ্যাক করে বিভিন্ন দেশে তথ্য ও অর্থ চুরির ঘটনা ঘটছে। এগুলো প্রতিরোধে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ কাজ করছে। দেশেও সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের গোয়েন্দারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কতদিন এরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটি এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। তবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি জানান, লেনদেন সহজ করার ফলে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে এখন সব সময়ই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হয়।
ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি ও অনলাইন ব্যাংকিং চ্যানেলের কর্মকর্তারা জানান, সতর্কবার্তা পেয়ে ব্যাংকগুলোতে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পিন পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার বড় অংকের অনলাইন লেনদেন, বিশেষ করে দেশের বাইরের লেনদেনে আলাদা তদারকিও করা হচ্ছে।
অর্থনীতি