যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিক্ষোভের সূত্রপাত। এদিকে গত কয়েকদিনে পুলিশের গুলিতে আরও কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভের গতি আরও বেড়ে গেছে।

গত ২৫ মে সোমবার সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন প্রতারণার অভিযোগে ফোন পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাস্তায় মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে হত্যা করে তাকে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‌‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’

universel cardiac hospital

এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। ওই ভিডিও প্রকাশ হতেই জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে সাধারণ মানুষ। ব্ল্যাক লিভস মেটার নামে শহরে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মাঝে কিছুদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে আবারও বেশ কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশের হাতে নিহত হওয়ায় আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

কয়েকদিন আগেই এক নিরস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকার পুলিশের গুলিতে আহত হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে এবং তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাকে গুলি চালানোর ওই ঘটনার প্রায় এক সপ্তা পেরিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে বিক্ষোভকারীদের রোষের শিকার হওয়ার একটি অগ্নিদগ্ধ ভবনের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ছবি প্রকাশ হয়েছে।

এদিকে, বর্ণবাদ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা। গত মাসের শেষের দিকে পোর্টল্যান্ডে ট্রাম্প সমর্থক ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। দক্ষিণপূর্ব থার্ড অ্যাভিনিউ ও দক্ষিণপশ্চিম অ্যালডার স্ট্রিটের দিক থেকে গুলির শব্দ শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বুকে গুলিবিদ্ধ একজনকে দেখতে পায়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হন।

এছাড়া বিক্ষোভ-দমনে ফেডারেল কর্মকর্তাদের বিভিন্ন শহরে মোতায়েন করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বরাবরই ট্রাম্পকে বর্ণবাদী বলেই জানেন সবাই। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনে তার সমর্থন থাকার কথা নয়। ফলে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে কেন্দ্র করে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে সাংবিধানিক সংকট নিয়েও শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর অবস্থান নিয়েও বেশ সমালোচনা হচ্ছে। কারণ বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের অভিপ্রায় দেখা গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর মধ্যে পদ্ধতিগত বর্ণবাদের কোনও চিহ্ন নেই বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিক্ষোভে উত্তপ্ত কেনোশায় সফরকালে সেখানকার সাম্প্রতিক সহিংসতাকে ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত ২৩ আগস্ট উইসকনসিনের কেনোশা শহরে জ্যাকব ব্লেক নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে পরপর সাতটি গুলি করে স্থানীয় পুলিশ। এরপর থেকেই আবারও বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা শহর। বিক্ষোভ ধীরে ধীরে সহিংসতায় রূপ নেয় এবং এতে গত সপ্তাহে অন্তত দুই বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে কিছু বললে বা কোনও ব্যবস্থা নিতে গেলে ঘটনা আরও জট পাকাবে আশঙ্কায় তাকে এসব থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ব্লেকের পরিবার।

তবে নির্বাচনের আগমুহূর্তে সেই অনুরোধ রক্ষা করার তেমন কোনও আগ্রই দেখা যায়নি এ রিপাবলিকান নেতার মধ্যে। ডেমোক্র্যাটশাসিত উইসকনসিনে কেউই নিরাপদ নয় দাবি করে সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ট্রাম্প আবারও সহিংসতা উসকে দেয়ায় ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেন এবং শহরটিতে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের কৃতিত্ব দাবি করেন। যদিও সহিংসতা রোধে উইসকনসিনের গভর্নর কেন্দ্রীয় বাহিনীর আগেই স্থানীয় নিরাপত্তা সদস্যদের মাঠে নামান এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্যগুলোর সহযোগিতা চান।

ট্রাম্প বলেন, এগুলো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নয়, অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস। বেপরোয়া বাম রাজনীতিবিদরা আমাদের জাতি ও আইন প্রয়োগকারীদের নিপীড়ক বা বর্ণবাদী হিসেবে প্রচারের ধ্বংসাত্মক বার্তা ছড়িয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

দেশটির অতীত ইতিহাসেও নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা দেখা গেছে। ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ববি কেনেডিকে হত্যা করা হয়। ১৯১২ সালে টেডি রুজভেল্ট উইনকনসিনে বক্তৃতা দেওয়া সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এমনকি ১৮৭৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েই গেছে।

ফলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও ক্ষমতা ধরে রাখবেন এবং এ কাজে তার সমর্থকদের ব্যবহার করবেন এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিতিয়ে দিতে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগের কোনো সুরাহা হওয়ার আগেই দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সন্নিকটে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে