মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন অসহায় মা পারুল বেগম। কিন্তু মামলা না নিয়ে উল্টো ওই মাকেই হাজতে ঢোকানোর হুমকি দিয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি সমিত কুমার কুণ্ডু।
এ ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মা। এ ছাড়া মেয়ের জামাই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শাহাবুল ও তার সহযোগীদের হামলার কারণে চারঘাটের নিজ বাড়ি ছেড়ে পারুল বেগম রাজশাহী মহানগরীর এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ বছর আগে চারঘাট উপজেলার তাতারপুর এলাকার পারুল বেগম তার মেয়ে আরিফার সঙ্গে একই এলাকার আকবর আলীর ছেলে শাহাবুল ওরফে সবরের বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই আরিফার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন স্বামী শাহাবুল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট সকালে আরিফা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে খবর পেয়ে চারঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিনই দুপুর আড়াইটার দিকে আরিফার মরদেহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর তড়িঘড়ি করে বিকাল ৫টার মধ্যেই মরদেহ দাফন করা হয়।
আরিফার মা পারুল বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই শাহাবুল, তার বাবা আকবর, তার দুই ভাইবোন আরিফার ঝুলন্ত মরদেহ নামিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে আমি আমার মেয়েকে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এর পর দেখতে পাই, আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- বুকে, নাকে ও কানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। এতে আমার ধারণা, আমার মেয়েকে তারা আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে অথবা তারা নিজেরাই তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে জামাই শাহাবুল এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাকে শারীরিক নির্যাতনসহ মাদক দিয়ে পুলিশ ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এলাকায় তার রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ১০-১২টি মাদক মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না।
পারুল বেগম বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে এই কথা বলার জন্য শাহাবুল তার সহযোগী আবুল, মাজেদুল, কালাম, কফিল, মিলন, ইউনুস ও মকসেদুলকে নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। ওই সময় আমি ঘরের ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে কোনোরকমে প্রাণে রক্ষা পাই। এরপর কিছু না নিয়েই চারঘাট থেকে রাজশাহী পালিয়ে আসি। বর্তমানে আমি নিঃস্ব। রয়েছি চরম নিরাপত্তাহীনতায়।
তিনি বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমি চারঘাট থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার ওসি আমাকে বলেন, আপনার মেয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আপনি থানায় অভিযোগ করতে এসেছেন কেন। এরপর ওসি মামলা না নিয়ে আমাকে থানা হাজতে ঢোকানোর হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তায় ভুগছি। বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীতে এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত শাহাবুলসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পারুল বেগমের মামলা না নেয়া এবং মাদক ব্যবসায়ী শাহাবুলের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট থানার ওসি সমিত কুমার কুণ্ড জানান, ওই নারীকে হাজতে ঢোকানোর হুমকি দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে শাহাবুল মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আমি এখনও অভিযোগ দেখিনি। দেখার পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া পারুল বেগমের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।