সদ্যপ্রয়াত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ওপর জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর ওপর আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবাই তাকে বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
রবিবার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অসামান্য অবদান রাখেন প্রণব মুখার্জি। এজন্য তাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাও দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের স্বীকৃতি আদায়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সংগঠিত ও সমর্থন আদায়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে বিভিন্ন দেশে সফরে পাঠান। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতে অবস্থানকালে তিনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তার এ অবদানের মধ্য দিয়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে আপনজন হয়ে রয়েছেন তিনি। সংসদ তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও দুঃখ প্রকাশ করছে।
শোক প্রস্তাবে প্রয়াত প্রণব মুখার্জির দীর্ঘ রাজনৈতিক ও কর্মজীবন তুলে ধরা হয়।
শোক প্রস্তাবের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশ এবং তার পরিবারের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রণব মুখার্জি একাত্তরে আমাদের পাশে ছিলেন, পঁচাত্তরেও পাশে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন আমার ওপর দোষারোপ করা হয় তখনও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। আমরা যখন ভারতে ছিলাম, রিভিউজি হিসেবে, নিজেদের নামটাও ব্যবহার করতে পারতাম না, তখন পারিবারিক স্বাদ পেয়েছিলাম প্রণব বাবুর পরিবারে।’
প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের জামাই ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী রাজনীতিবিদ ছিলেন। এই উপমহাদেশে তার মতো জ্ঞানী রাজনীতিবিদ পাওয়া কঠিন। কংগ্রেস করলেও সব দল তাকে সম্মান করত।’
শোক প্রস্তাবে আরও যাদেরকে স্মরণ
শোক প্রস্তাবে প্রয়াত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এমপি, ইসরাফিল আলম এমপিকেও স্মরণ করেন তাদের সহকর্মীরা।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ, এইচ এম এ গাফফার, আবুল কাশেম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক হুইপ মো. আশরাফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুর রহমান, আ ন ম নজরুল ইসলাম, শেখ মো. নুরুল হক, এ টি এম আলমগীর, সুলতান উদ্দিন ভূইয়া, শাহজাহান আলী তালুকদার, সাইফুল আযম, কমরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস ও ইঞ্জিনিয়ার শামছউদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে সংসদ শোক জানিয়েছে।
সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত, সেক্টর কমান্ডার অবু ওসমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, প্রতিরক্ষ সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, আইন সচিব নরেন দাস, সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল, বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী মুর্তজা বশীর, সাংবাদিক কামাল লোহানী, রাহাত খান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরামুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামানের মা ও মাগুরা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ারা জামান, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, ভাষা সংগ্রামী ডা. সাঈদ হায়দার, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলাকচিত্রী সাইদা খানম, সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব সুরকার আলাউদ্দিন আলী, কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, ভাস্কর মৃনাল হক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব বরকতউল্লাহ, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একান্ত সচিব ও ছোট ভাই আব্দুল হাইয়ের মুত্যুতে শোক জানানো হয়।
এছাড়া নারাণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে বিস্ফোরণে যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য সংসদে শোক জানানো হয়।