রোহিঙ্গা গণহত্যা: আইসিসিতে ২ সেনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রোহিঙ্গা

রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর কীভাবে বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে তা নিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য। প্রাইভেট পদাধিকারী ওই দুই সেনার নাম মিও উইন তুন (৩৩) ও জ নায়েং তুন (৩০)।

মঙ্গলবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর ওই দুই সেনাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ শহরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চলছে।

universel cardiac hospital

আইসিসিতে দেয়া সাক্ষ্যে ওই দুই সেনা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেসময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সৈনিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘যত রোহিঙ্গাকে দেখবে, সবাইকে গুলি করবে’। এসময় দু’জনে একের পর এক গ্রাম ধ্বংস, হত্যা ও গণকবর দেয়ার বীভৎস বর্ণনা দিয়েছেন।

মিও উইন তুন জানিয়েছেন, তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় সেল টাওয়ার ও একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়েছিল।

প্রায় একই সময় পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় একই ধরনের হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন জ নায়েং তুন। তার ওপরও নির্দেশ ছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধ যাকেই দেখবে সবাইকে হত্যা করবে।

এ সেনা বলেন, আমরা প্রায় ২০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছিলাম। পরে শিশু ও বৃদ্ধদের মরদেহ একটি গণকবরে ফেলা হয়।

ভিডিও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দুই সদস্য অন্তত ১৫০ রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং কয়েক ডজন গ্রাম ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। এসময় তারা ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন যারা সরাসরি এ ধরনের নৃশংসতায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া, সেনাবাহিনীর ছয়জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ দুই সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনার বেশ মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। পার্থক্য শুধু, আগের বর্ণনাগুলো ছিল ভুক্তভোগীদের আর এবারের কথাগুলো বেরিয়েছে সরাসরি অপরাধীদের মুখ থেকেই।

মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ফরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জনগণের কাছে এটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এই দু’জন আইসিসিতে উপস্থিত মিয়ানমারের প্রথম অপরাধী এবং আদালতের হেফাজতে থাকা প্রথম অভ্যন্তরীণ সাক্ষী হতে পারেন।

আন্তর্জাতিক আদালতের নিয়মে অনুসারে সাক্ষীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার (উইটনেস প্রটেকশন) ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে