বলিউড দিনে দিনে উজ্জ্বল হয়েছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের আঙিনায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিনেমার বাজারও বলা হয় ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে। দীর্ঘদিনের ইতিহাসে এখানে মুক্তি পেয়েছে শত শত কালজয়ী সিনেমা। সেগুলো যেমন দর্শক-সমালোচককে মুগ্ধ করেছে; তেমনি মাতিয়েছে বক্স অফিস।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার মূল্যায়নে পরিবর্তন এসেছে। ৫ টাকার টিকিট এখন ৫০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সেদিক থেকে দিলীপ-মধুবালার ‘মুঘল-ই-আজম’, অমিতাভ-ধর্মেন্দ্রদের ‘শোলে’ কিংবা শাহরুখ-কাজলের কালজয়ী ‘ডিডিএলজে’র আয়ের পরিমাণ হয়তো বর্তমান সময়ের ‘বাহুবলী’ কিংবা ‘পিকে’, ‘কবীর সিং’ সিনেমার চেয়ে কম। তাই বলিউডের ইতিহাসে সেরা ব্যবসা সফল ১০ ছবির তালিকা করতে গিয়ে অনেক সফল ও বিভিন্ন প্রজন্মে রেকর্ড সৃষ্টিকারী সিনেমাগুলোকে পাওয়া যায় না।
কিন্তু টাকার মূল্যের যে পরবির্তন ঘটেছে; সেখানে বিচার-বিশ্লেষণে হয়তো বর্তমানের ১ হাজার কোটি টাকা আয়ের ‘বাহুবলী’কেও পেছনে ফেলে দেবে সত্তর-আশি বা নব্বই দশকের অনেক সিনেমা। সেই আলোচনা বিস্তর জটিল ও সময় সাপেক্ষ। বাদ দেয়া যাক।
বরং দেখে নেয়া যাক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া তালিকায় বলিউডের বক্স অফিস কাঁপানো সেরা ১০ ছবির নাম। এ তালিকায় ঠাঁই পাওয়া ছবিগুলোকে শুধুমাত্র ভারত থেকেই উপার্জিত আয়ের ভিত্তিতেই ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাহুবলী ২
পরিচালক : এসএস রাজামৌলি
অভিনয়ে : প্রভাস, রানা দাগগুবাতি এবং আনুশকা শেঠি
বক্স-অফিস সংগ্রহ : ৫১০ কোটি রুপি
ছবিটি বাহুবলী চলচ্চিত্র ফ্র্যাঞ্চাইজের দ্বিতীয় পর্ব। এই ছবির মূল উপজীব্য অমরেন্দ্র বাহুবলী ও ভল্লালদেব নামে দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভারতীয় সিনেমায় ভিজ্যুয়াল এফেক্টের মানকে একটি অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছে সিনেমাটি। পরিচালক যেভাবে দর্শকদের একটি আবেগময় রোলার কোস্টার রাইড দিয়েছেন কল্পনার জগতে তা সত্যিই প্রশংসিত। মুক্তিলাভের ছয় দিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী আটশ কোটি টাকা টাকা আয় করে এই ছবিটি ‘পিকে’ ছবির আয়কেও ছাপিয়ে যায়। অল্পকালের মধ্যেই এটি সর্বকালের সর্বাধিক লাভজনক ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্থান অধিকার করে নেয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও উইকিপিডিয়াতে ছবিটির আয়ের ব্যাপারে নানা রকম তথ্য এসেছে। তবে প্রায় সবার তথ্যই বলছে, ছবিটি ভারতের বাজারে ৫০০ কোটি রুপিরও বেশি আয় করেছে।
দঙ্গল
পরিচালক : নীতেশ তিওয়ারি
অভিনয়ে : আমির খান, ফাতিমা সানা শেখ ও সন্যা মালহোত্রা
বক্স-অফিস সংগ্রহ : ৩৮৭ কোটি রুপি
দঙ্গল হিন্দি শব্দ। এর অর্থ কুস্তিখেলা। এই সিনেমাটি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয়কারী সিনেমার মধ্যে অন্যতম এবং চীনে সবচেয়ে বেশি আয়কারী ২০টি সিনেমার মধ্যে একটি। ভারতীয় পরিচালক নিতেশ তিওয়ারি পরিচালিত জীবনীবিষয়ক ক্রীড়াকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র এটি। আমির খান এই চলচ্চিত্রে মহাবীর সিং ফোগাট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যিনি তার দুই মেয়ে গীতা ফোগাট এবং ববিতা কুমারীকে কুস্তি শিক্ষা দেন।
বাহুবলী : দ্য বিগিনিং
পরিচালক : এসএস রাজামৌলি
অভিনয়ে : প্রভাস, রানা দাগগুবাতি, তামান্নাহ ভাটিয়া, আনুশকা শেঠি
বক্স অফিস সংগ্রহ : ৩৪১ কোটি রুপি
২০১৫ সালের তেলুগু ভাষার ভারতীয় মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র ‘বাহুবলী’র ১ম অংশ এটি। দুই অংশে সমাপ্য এই চলচ্চিত্রটির কাহিনি রচনা ও পরিচালনা করেছেন এসএস রাজামৌলি এবং প্রযোজনা করেছেন শবু ইয়ারলাগাড্ডা ও প্রসাদ দেবিনেনি। চলচ্চিত্রটি একই সাথে তেলুগু এবং তামিল ভাষায় অনুবাদ করে নির্মিত হয়েছিলো। সেইসঙ্গে ডাবিং করে মুক্তি পায় হিন্দি ও মালায়ালম ভাষাতেও। বাহুবলীতে একই সঙ্গে প্রভাস, রানা দাগগুবাতি, তামান্নাহ ভাটিয়া, আনুশকা শেঠির মত তারকারা মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন। সিনেমাটি সেই সময়ের ভারতের সব থেকে বেশি বাজেটে নির্মিত হিসেবে রেকর্ড করেছিলো।
সঞ্জু
পরিচালক : রাজকুমার হিরানি
অভিনয়ে : রণবীর কাপুর, মনীষা কৈরালা, ভিকি কৌশল, পরেশ রাওয়াল, আনুশকা শর্মা, দিয়া মির্জা, সোনম কাপুর
বক্স অফিস সংগ্রহ : ৩৪১.২২ কোটি রুপি
২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি দারুণ সাড়া ফেলেছিলো দর্শকের মাঝে। এটি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক। যেখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রণবীর কাপুর। তার চোখ ধাঁধানো অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। ছবিটিতে সঞ্জয়ের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনীষা কৈরালা।
পিকে
পরিচালক : রাজকুমার হিরানি
অভিনয়ে : আমির খান, আনুশকা শর্মা, সঞ্জয় দত্ত এবং বোমান ইরানি
বক্স-অফিস সংগ্রহ : ৩৪০.৮০ রুপি
২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আমির খান। অন্যান্য চরিত্রে আনুশকা শর্মা, সঞ্জয় দত্ত, বোমান ঈরানী ও সুশান্ত সিংহ রাজপুত অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। চলচ্চিত্রটিতে পিকে নামের এক মানব-আকৃতির ভিনগ্রহবাসীর গল্প বলা হয়েছে। যে এক তরুণী টিভি সাংবাদিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নির্মাতা হিরানির মতে চলচ্চিত্রে তিনি আমিরের ‘পিকে’ চরিত্রটি আব্রাহাম কোভুর নামে এক যুক্তিবাদীর বাস্তব জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাজিয়েছেন।
টাইগার জিন্দা হ্যায়
পরিচালক : আলি আব্বাস জাফর
অভিনয়ে : সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ
বক্স অফিস সংগ্রহ : ৩৩৯.১৬ কোটি রুপি
যশরাজ ফিল্মসের জনপ্রিয় সিরিজ ‘টাইগার’। এ সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’। ছবিটি ২০১৭ সালে মুক্তি পায় এবং দারুণ সাড়া পায়। এখানে সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের কেমিস্ট্রিও তুমুল হিট হয়।
বজরঙ্গি ভাইজান
পরিচালক : কবির খান
অভিনয়ে : সালমান খান, হারশালি মালহোত্রা, কারিনা কাপুর
বক্স অফিসে সংগ্রহ : ৩২০.৩৪ কোটি রুপি
বজরঙ্গি ভাইজান চলচ্চিত্রটি এখনও পর্যন্ত সালমান খানের অভিনয় জীবনের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের একটি। এটি ভারতে এবং বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ঘরোয়াভাবে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দ্রুততম ভারতীয় রুপি ১ বিলিয়ন আয় করা ছবি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’। ছবিটির মানবিক আবেদন সারা ভারতে সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া এই ছবিটি পাকিস্তানেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
সুলতান
পরিচালক : আলি আব্বাস জাফর
অভিনয়ে : সালমান খান, আনুশকা শর্মা
বক্স অফিস সংগ্রহ : ৩০০.১৬ কোটি রুপি
বলিউডের ইতিহাসে ব্যবসা সফল সেরা ১০ ছবির নায়ক হিসেবে যৌথভাবে শীর্ষে সালমান খান ও আমির খান। তাদের তিনটি করে ছবি রয়েছে সেরা দশের তালিকায়। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুলতান’ ছবিটি দিয়ে নিজের দেশের হলগুলো থেকে ৩০০ কোটি রুপি আয় করেছিলেন এই অভিনেতা। যা তালিকায় ৮ নম্বর স্থান দখল করে আছে। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন আনুশকা শর্মা।
ধুম ৩
পরিচালক : বিজয় কৃষ্ণ আচার্য্য
অভিনয়ে : আমির খান, অভিষেক বচ্চন, ক্যাটরিনা কাইফ, উদয় চোপড়া
বক্স অফিস সংগ্রহ : ২৮৪.২৭ কোটি রুপি
সেরা ১০ ছবির তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানের ‘ধুম ৩’ ছবিটি। এখানে তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন অভিষেক বচ্চন, উদয় চোপড়া, ক্যাটরিনা কাইফরা। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে আমির ছিলেন দ্বৈত চরিত্রে।
কবীর সিং
পরিচালক : সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা
অভিনয়ে : শহিদ কাপুর, কিয়ারা আদভানি
বক্স অফিস সংগ্রহ : ২৪৩.৭৩ কোটি
দক্ষিণের সিনেমার রিমেক এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৯ সালে। এখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে হৈচৈ ফেলে দেন অভিনেতা শহিদ কাপুর। ক্ষ্যাপাটে এক চিকিৎসকের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। যিনি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারান। ছবিটি ভাষাগত কারণে এবং নারীদের হেয় করার অপবাদে সমালোচিত হলেও বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছে।