ইউএনওর ওপর হামলা: মালি রবিউলের স্বীকারোক্তি

ইউএনও

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া ইউএনওর বাসার সাবেক মালি রবিউল ইসলাম ফরাস।

তার দেয়া তথ্যমতে এই হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি এবং মই উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার বিকালে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য।

সিসিটিভির ফুটেজ এবং সাময়িক বরখাস্ত ঘটনার বিবেচনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে স্বীকারোক্তিতে তিনি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে ২০১৯ সালের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পান। চার মাস আগে মালি রবিউল ইসলাম ফরাস ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়। এই ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্তের জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইন্সপেক্টর জেনারেলের নির্দেশনায় এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আমাদের এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে দিনাজপুর পুলিশ বিনিদ্র রজনী পার করছে। দিনের ২৪ ঘণ্টার পুরোটাই তারা তদন্ত কাজে ব্যয় করছেন।’

প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফরসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় আহত দুজনকেই রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইউএনও ওয়াহিদাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে নেয়া হয় ঢাকার নিউরোসাইন্স মেডিকেল হাসপাতালে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে করা হয় অস্ত্রোপচার। এখনো তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ সুস্থ হলেও তার কোমরের নিচের অংশ এখনো অবশ রয়েছে।

এদিকে এই মামলায় শনিবার বিকাল ৫টায় রবিউল ইসলাম ফরাসকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম আবু জাফর। শুনানি শেষে বিচারক ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে এই মামলার প্রধান আসামি যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল হককে সাত দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। গতকাল দুই আসামি নবীরুল ও সান্টুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার প্রত্যাহারকৃত ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামকে পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়েছে। তার স্থলে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রংপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর মো. আজিম উদ্দিনকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে