বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার রিচার্ড টিমের চিরবিদায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফাদার রিচার্ড টিম
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং ঢাকার নটর ডেম কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাদার ড. রিচার্ড উইলিয়াম টিম আর নেই। ৯৭ বছর বয়সে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।

১৯২৩ সালের ২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন ফাদার টিম। প্রায় ৬৬ বছর বাংলাদেশে বসবাস করেছেন তিনি। বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের অন্যতম এ পথিকৃৎ নটর ডেম কলেজের ষষ্ঠ অধ্যক্ষ। খ্যাতনামা কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগের সূচনা হয়েছিল তার হাত ধরে। নটর ডেম কলেজ ডিবেটিং ক্লাব (১৯৫৩), নটর ডেম কলেজ সায়েন্স ক্লাব (১৯৫৫) এবং নটর ডেম কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবেরও (১৯৬৬) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

universel cardiac hospital

১৯৫২ সালে ঢাকায় আসেন ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ ও জীববিজ্ঞানী। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার।

১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলার মনপুরাসহ আশপাশের এলাকায় দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম ও পুনর্বাসনে নিয়োজিত ছিলেন ফাদার উইলিয়াম টিম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের সহযোগিতা করেছেন তিনি।

১৯৭১ সালের আগস্টে ঢাকায় এসে গোপনে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার খবর সংগ্রহ করে ওয়াশিংটনে ড. জন রুডিসহ বিভিন্ন লবি গ্রুপের কাছে পাঠাতেন ফাদার টিম। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিরোধিতা করেন এবং এ দেশের মানুষের দুর্দশা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বিদেশে জোর প্রচারণা চালান।

পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পরে মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী নতুন দেশ গড়তে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে কারিতাসের কর্মসূচিতে যোগ দেন ফাদার টিম।

৮০ এবং ৯০-এর দশকে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাংলার মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। কাঁধে একটি কাপড়ের ব্যাগ, মাথায় হেলমেট এবং ভেস্পা স্কুটারে চড়ে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে বেড়িয়েছেন এ মহানুভব মানুষটি। ১৯৭৪ সালে বিচারপতি ও শান্তি কমিশন শুরুর পরে নির্বাহী সচিব হিসেবে দীর্ঘ ২৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক লাভ করেছেন ফাদার টিম। মানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করায় এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত রেমন ম্যাগসেসে পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে