গত বছরের মতো এবারও হঠাৎ করেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পেঁয়াজে বাজারে। একদিনেই পেঁয়াজের দাম ৬০ থেকে ইতিমধ্যে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। ভারতের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন খোদ ভারতেরই অনেকে।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, দেশের বাজারের পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাতারাতি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে আর্জি জানালেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পওয়ার। তার মতে, এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে পারে। পাকিস্তান এবং পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে বলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শরদ।
পীযূষ গয়ালের সঙ্গে পেঁয়াজের রপ্তানি নিয়ে আলোচনার কথা টুইট করে জানিয়েছেন শরদ। তার দাবি, গয়াল তাকে আশ্বস্ত করেছেন, বাণিজ্য, অর্থ এবং উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক ঐকমত্যে পৌঁছলে ওই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়ার ভাবনা চিন্তা করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
টুইটে শরদ লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং আমরা ধারাবাহিকভাবে তা রপ্তানি করে আসছি, এটা আমি তার (পীযূষ গয়াল) গোচরে এনেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আচমকা একটা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের ধারাবাহিক সরবরাহকারী হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তিতে জোরালো ধাক্কা দিতে পারে।’
অন্য একটি টুইটে শরদ পওয়ার বলেছেন, ‘আমি এটাও জোর দিয়ে বলেছি যে, এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান এবং পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশ।’ তার দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
আনন্দবাজার লিখেছে, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোজুড়ে বিস্তৃত দেশের ‘অনিয়ন বেল্ট’। ওই রাজ্যগুলো থেকে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, উপসাগরীয় দেশগুলোসহ বহু জায়গাতেই রপ্তানি হয়। কিন্তু গতকাল কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞার জেরে তা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, প্রবল বর্ষণের জেরে কর্নাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রীষ্মের ফসল নষ্ট হওয়ার মুখে। তার প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের যোগানে। তার ফলে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসলগাঁওতে পেঁয়াজের দাম বিপুল চড়ে গিয়েছে। গত মার্চের থেকে দ্বিগুণ দাম হয়েছে চলতি মাসে। তাই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে লাগাম পরাতে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যদিও, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। সারা ভারত কিসান সভার নেতা অজিত নাভালের মন্তব্য, ‘এই নিষেধাজ্ঞায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ এবং তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ সামনে বিহার নির্বাচন। এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়লে চাপে পড়তে পারে শাসক দল। তাই এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নাভালে।