পেঁয়াজের বাজার অস্থির, দামে সেঞ্চুরি

বিশেষ প্রতিনিধি

পেঁয়াজ
ফাইল ছবি

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই বাংলাদেশে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। একদিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়ে পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত গতকাল হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ল।

universel cardiac hospital

অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই প্রথমে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম, ৫০-৬০ টাকা কেজি দামের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়।

পরে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর গত মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত।

গতকাল আবার পেঁয়াজ রপ্তানি না করার ঘোষণা দেয় ভারত। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দাম বেড়ে গেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারেও ঘাটতি রয়েছে। মওসুমের কারণে এই ঘাটতি দেখা দিলেও কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই গত কয়েক মাসে বিপুল রপ্তানি হয়েছে।’ ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণার পর স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

দাম আরও বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় ঢাকার বাজারে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন পেঁয়াজ কিনতে। অনেকে বেশি বেশি করে কিনেছেন। এ সুযোগ নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বহুগুণ বেড়েছে।

মিরপুর ১ নম্বর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা জিয়াউল কবীর মত ও পথকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে ক্রেতারাও বেশি কিনছেন। একজন ক্রেতা গতকাল রাতেই পাঁচ কেজি কিনেছেন। ওই ক্রেতা সকালে এসে আরও ১০ কেজি পেঁয়াজ নিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অথচ গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। গতকাল পাইকারিতে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল তা আজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হয়ে গেছে।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রায়েরবাগ কাঁচাজারের ব্যবসায়ী আরাফাত মত ও পথকে বলেন, গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করেছি ৬০ টাকা। আজ পাইকারিতে দাম ৮০ টাকা। যে কারণে ৯০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ গতকাল ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর আজ পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থা চললে বাজারে পেঁয়াজের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিতে পারে। এতে আবারও গত বছরের মতো অবস্থা হবে কি না বলা মুশকিল।

পেঁয়াজ কিনতে হাতিরপুল বাজারে যান শফিক রেজা। তিনি বলেন, গতকালই পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজিকে বিক্রি করতে দেখলাম। আজ দেখি ১০০ টাকা। দাম আবারও অস্বাভাবিক হতে পারে এমন আশঙ্কায় তিন কেজি পেঁয়াজ কিনলাম।

মধুবাগে ভ্যানে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা বিক্রি করছিলেন কায়েস বিল্লাহ। দুই মিনিটের মধ্যে তার সব পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যায়। এ বিষয়ে কায়েস বলেন, আমার পেঁয়াজ গতকাল কেনা। কিছুটা লাভে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।

নতুন বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, গতকাল ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় আজ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার ওপরে। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে