জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। বলা হয়, তিনি জন্মেছিলেনই দেশটির শীর্ষ নেতা হওয়ার জন্য। বুধবার আবের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তার দীর্ঘদিনের সহযোগী ইয়োশিহিদে সুগা। গত সোমবার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। সংসদ সদস্যরাই বেছে নেন তাদের শীর্ষ নেতাকে। সেক্ষেত্রে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ইয়োশিহিদে সুগার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আর কোনও বাধা থাকার কথা নয়।
ক্ষমতায় চূড়ায় পৌঁছানোর এ সুদীর্ঘ যাত্রাপথ মোটেও সুগম ছিল না ৭১ বছর বয়সী ইয়োশিহিদে সুগার জন্য। জাপানের আকিতা অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তিনি। বাবা ছিলেন স্ট্রবেরি চাষি। হাইস্কুল পার করেই রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান ইয়োশিহিদে সুগা। সেখানে পড়াশোনার খরচ জোগাতে কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি ও মাছের বাজারে কাজ করেছেন তিনি। গ্রাজুয়েশন শেষে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন সুগা, তবে সেখানে মন টেকেনি। বিশ্বকে বদলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে পরে যোগ দেন রাজনীতিতে।
আশির দশকের শেষের দিকে ইয়োকোহামার সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইয়োশিহিদে সুগা। সেসময় রাজনৈতিক যোগাযোগ বা অভিজ্ঞতা কোনোটাই খুব বেশি ছিল না তার। শুধু ছিল দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মনোবল। স্বশরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এভাবে দৈনিক ৩০০ বাড়ি করে মোট ৩০ হাজার বাড়ির দরজায় হাজির হয়েছিলেন সুগা। এলডিপির তথ্যমতে, ওই নির্বাচনী প্রচারণায় অন্তত ছয় জোড়া জুতো ক্ষয় হয়েছিল এ নেতার।
২০১২ সালে শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন সুগা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর ডানহাত ছিলেন তিনি। আবের গোটা শাসনামলেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন। এসময় তার ক্ষমতাকে অনেকটা চিফ অব স্টাফ ও প্রেস সচিবের সমন্বয় বলা চলে।
প্রথম নির্বাচনে জেতার সেই দৃঢ় চেষ্টা আর পরিশ্রমের অভ্যাস আর কখনোই বদলায়নি ইয়োশিহিদে সুগার। প্রকাশ্যে না এসেও বহু আলোচিত চুক্তির কারিগর তিনি। হয়ে উঠেছেন জাপানের অন্যতম সফল রাজনৈতিক নেতা ও আদর্শ। একমাত্র সুগাই শিনজো আবের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: সিএনএন