করোনা মহামারি স্থবির করে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। অদৃশ্য এই সংক্রামক ভাইরাসের ছোবলে গতিশীল পৃথিবীটা হঠাৎ করেই নিশ্চল হয়ে গেছে। লকডাউনে গেল ছয় মাস আমূল পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ক্ষতি পুষিতে নিতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতি। চাকরি হারাচ্ছেন কয়েক কোটি মানুষ। এমন সময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, ‘গেল ৬০ বছরের মধ্যে এবারেই প্রথম বড়ধরনের অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ছে এশিয়া। মহামারির কারণে চলতি বছরে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ০ দশমিক ৭ শতাংশ কমতে পারে।’
তাদের ‘আউটলুক আপডেটে’ এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এদিকে ২০২০ সালে এই অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ০.১% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুইয়ুকি সাওয়াদা বলেছেন, ‘এই মহামারি এশীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে মন্দার মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এশিয়ায় আঞ্চলিক মন্দা দেখা দিয়েছে।’
তবে এডিবির প্রত্যাশা ২০২১ সালের মধ্যে এই মন্দা কাটিয়ে আবারও গতি ফিরবে এশিয়ার অর্থনীতিতে। তাদের দাবি, আগামী বছরে এশিয়ার অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটতে পারে। একই বছর চীনের অর্থনীতিতে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
কিন্তু মহামারি দীর্ঘায়িত এবং সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে এশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টা পথচ্যুত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আঞ্চলিক এই ব্যাংক।
এডিবির এই মূল্যায়ন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ চলতি বছরের শুরুর দিকে এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বছর ভারতের অর্থনীতি ৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কোচন দেখছে। দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজির অর্থনীতি চলতি বছর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একইভাবে মালদ্বীপের অর্থনীতির সঙ্কোচন ঘটতে পারে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।