লোকারণ্য হাটহাজারী: চার উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাটহাজারী

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে জনতার ঢল নেমেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়।

আজ শনিবার দুপুর দুইটায় জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়েছে হাটহাজারীর সব সড়ক-গলিপথ। আল্লামা শফীকে একনজর দেখতে ও জানাজায় শরিক হতে তার ছাত্র ও ভক্তরা হাটহাজারীতে ভোর থেকেই আসতে শুরু করেন। সেখানে রীতিমতো জনস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে।

universel cardiac hospital

ইতোমধ্যে জানাজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রবীণ এই আলেমকে শেষবারের মতো দেখা এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে রাখা হবে। এরপর বেলা ২টায় জানাজা শেষ মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

জানাজাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের ‘অনভিপ্রেত’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন সাত ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় চার চার প্লাটুন এবং ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়া উপজেলায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর জন্ম রাঙ্গুনিয়ায়। এছাড়া ফটিকছড়ি ও পটিয়া উপজেলায় কয়েকটি বড় কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। সে কারণেই হাটহাজারীর সঙ্গে এই তিন উপজেলায় অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম জানান, শনিবার সকাল থেকে জেলার হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিকছড়িতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন।

হাটাহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন জানান, আহমদ শফীর মৃতদেহ হাটহাজারীতে পৌঁছেছে। দুপুরে জানাজা শেষে সেখানে দাফনের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

জানাজায় যোগ দেয়ার জন্য সারা দেশ থেকে অনুসারীরা আসছেন উল্লেখ করে রুহুল আমীন বলেন, এলাকা লোকে লোকারণ্য। এ কারণে বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

হাটহাজারীর ইউএনও আরও বলেন, অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে আমরা বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে করে কেউ কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ নিতে পারে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্বকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসার অভ্যন্তরে দু পক্ষের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে গত কয়েকদিনে। ছাত্র বিক্ষোভের মুখে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান আল্লামা শফী। সেই রাতে মাদ্রাসার মজলিসে শূরার বৈঠকে আল্লামা শফী তার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে তাকে সদরুল মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়।

পদত্যাগ করার পরই মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী। দ্রুত হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। পরে হাসপাতালের তৃতীয় তলার আইসিইউর ৮ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয় হেফাজতের আমিরকে।

শুক্রবার বিকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়। সন্ধ্যায় গেন্ডারিয়া আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৬টা ২০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে