সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও মাদক চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ঐকমত্য হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে এমন সিদ্ধান্ত আসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি।
রাজধানীর বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫০তম এই সম্মেলনে মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও মানবপাচার রোধে সিদ্ধান্তও হয়। এছাড়া আটজন বন্দিকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। সীমান্তে যেকোনো ইস্যুতে মানবাধিকারের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়াতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। এ সময় বিএসএফ সীমান্ত হত্যা বন্ধে নিশ্চিত করেছে। জয়েন্ট পেট্রোলিং (যৌথ টহল) এর ব্যাপারে বিজিবি-বিসিএফ সম্মত হয়েছে।
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বিএসএফের তরফ থেকে অংশ নেয় রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল।
সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানা বলেন, আমরা বেশ কিছু বিষয়ে একমত হতে পেরেছি। সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত /মারধরের ঘটনায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করব। করোনাকালীন সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ টহল পরিচালনা বন্ধ থাকলেও টহল বৃদ্ধি, জনসচেতনামূলক কর্মসূচি এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা উভয়পক্ষ একমত হয়েছি। আমরা মনে করি, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনে বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে সীমান্তের আক্রমণ বা হামলা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে যেসকল অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার ৭০ শতাংশ ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটির জন্য হয়ে থাকে। আর সবগুলোই প্রায় রাত ১০টা থেকে সকাল সাতটার মধ্যে হয়। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু দেশ। এ দেশের সীমান্তের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এসব অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো আমরা নেব।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, আমরা উভয়পক্ষের সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকদ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ এবং জাল মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেব। পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
সম্মেলন শেষে আজই ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে বিএসএফ প্রতিনিধি দলের। সম্মেলনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি।