ঝিনাইদহের ধর্ষণ মামলার রায় জালিয়াতি করে জামিন আবেদন করায় এক আসামি, দুই কারারক্ষী, এক এফিডেভিটকারী ও এক তদবিরকারকের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে এই মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্তে কোনো আইনজীবী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি সাজার মেয়াদ সাত বছর দেখিয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন যা বিস্ময়কর।
হাইকোর্টে উপস্থাপিত জামিন আবেদনের নথিতে উল্লেখ করা হয়, আসামি কবির বিশ্বাসের সাজা হয়েছে সাত বছর। অথচ এই মামলায় একমাত্র সাজা যাবজ্জীবন। এতে আদালতের সন্দেহ হয়। শুনানি শেষে আসামি কবির বিশ্বাস, কারারক্ষী বিশ্বজিত ওরফে বাবু ও খাইরুল, এফিডেভিটকারী কাদের বিশ্বাস এবং তদবিরকারক চান্দ আলীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন (বাপ্পী)। আসামি কবির বিশ্বাসের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের পর ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন (বাপ্পী) বলেন, ধর্ষণ মামলার রায় জালিয়াতি করে জামিন আবেদন করায় এক আসামি, দুই কারারক্ষী, এক এফিডেভিটকারী ও এক তদবিরকারকের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তদন্তে কোনো আইনজীবী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল একটি ধর্ষণ মামলায় আসামি কবির বিশ্বাসকে (৬৫) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ মামলায় কারাগারে থাকা কবির বিশ্বাস হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে একাধিকবার আপিল ফাইল করে জামিন চান।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চেও একবার জামিন চাওয়া হলে তা খারিজ হয়।
সম্প্রতি যাবজ্জীবনের জায়গায় সাত বছরের সাজা উল্লেখ করে আপিল ফাইল করে জামিন চান কবির বিশ্বাস। বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেনের (বাপ্পী) দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে এতে প্রতিয়মান হয় যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাত বছরের সাজা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে ভুয়া সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে কারাগারের দুই কনস্টেবল ও এক তদবিরকারক জড়িত রয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে তলব করে রোববার আদেশের জন্য রাখেন। এদিন শুনানিতে শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, তিনি জালিয়াতির বিষয়টি জানতেন না।