স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক আব্দুল মালেকের রয়েছে ধানমন্ডি-উত্তরায় বিলাসবহুল তিনটি বাড়ি। সব কটি সাততলা। একাধিক স্ত্রী ও সন্তানের নামে রয়েছে ২৪টি ফ্ল্যাট। রাজধানীর তুরাগে ছেলের নামে গড়ে তুলেছেন ‘ডেইরি ফার্ম’। সেখানে পালন করেন কোটি টাকার গবাধি পশু। নিজের এসব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে সঙ্গে রাখতেন অস্ত্রসহ ‘গানম্যান’।
অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালকের (ডিজি) এই গাড়িচালক অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন শতকোটি টাকা। অধিদপ্তরে বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির, টেন্ডারসহ সব ক্ষেত্রেই বিচরণ ছিল তার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অল্প কিছুদিনেই হয়ে যান অঢেল সম্পদের মালিক। শনিবার গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
আজ রোববার সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি র্যাব জানতে পারে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আব্দুল মালেক ওরফে ‘মালেক ড্রাইভার’ নামে এক ব্যক্তি অল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এই সম্পদের নিরাপত্তায় বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করেন। গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে তুরাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, বিপুল পরিমাণ জাল টাকা এবং ল্যাপটপ।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এবং গাড়িচালক। এ ছাড়া তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারদের শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই গাড়িচালকের ঢাকায় ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানমন্ডি, উত্তরাসহ কয়েকটি জায়গায় রয়েছে বিলাসবহুল সাততলা তিনটি বাড়ি। কোটি টাকা খরচ করে ছেলের নামে রাজধানীর তুরাগে করেছেন ডেইরি ফার্ম।
আব্দুল মালেক ওরফে মালেক ড্রাইভারের রাতারাতি এত সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তাকে কমিশন থেকে তলব করা হয়েছে। এ ছাড়া তার অর্থনৈতিক বিষয়ে হিসাব দাখিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মালেকের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে এবং জাল টাকা রাখার দায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তুরাগ থানায় একটি মামলা করেছে।’
প্রাথমিকভাবে তার সম্পদ ১০০ কোটি টাকার উপরে বলে জানতে পেরেছে র্যাব। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুদক ও সিআইডি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। এ ছাড়া জাল টাকার বিষয়ে র্যাব অনুসন্ধান করছে বলেন জানান এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল মালেক র্যাবকে জানান, সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেই তিনি জাল টাকার কারবার করতেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মচারী ১৯৮২ সালে মাস্টার রোলে চাকরি শুরু করেন। অষ্টম শ্রেণি পাস এই গাড়িচালক ৮৬ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পদোন্নতি পান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার বা ভালো সম্পর্ক রাখার মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন।
পারিবারিক জীবনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা একাধিক বিয়ে করেছেন। তার অনেকগুলো সন্তান রয়েছে। ফ্লাট ও ডেইরি ফার্ম করে দিয়ে তিনি তাদের প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন।
ডেইরি ফার্মে ৬০ থেকে ৭০টির মতো গবাধি পশু আছে। এই সম্পদ তিনি বদলি বাণিজ্য, বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করে উপার্জন করেন।
সাবেক পরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না এমন প্রশ্নে র্যাব মুখপাত্র বলেন, আব্দুল মালেক সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি অধিদপ্তরের নতুন পরিচালকের গাড়িচালক। এর বাইরে ‘গাড়িচালক ইউনিয়নের সভাপতি’ হিসেবে তার একটি আলাদা প্রভাব ছিল। এই বিষয়গুলো পুঁজি করেই মূলত তিনি বিপুল অর্থের মালিক হন।