বেশ কয়েক মাস ধরে জটিলতার পর অবশেষে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) জন্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এন্টিজেনভিত্তিক র্যাপিড টেস্টিংয়ের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে আদেশে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর।
আদেশে বলা হয়, সারাদেশে এন্টিজেন টেস্টের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অতি স্বল্প সময়ে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণপূর্বক দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সকল স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এন্টিজেন ভিত্তিক টেস্ট চালুর অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো। তবে শর্ত থাকে যে, যাচাই-বাছাইয়ের নিমিত্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রক্রিয়াধীন কোভিড-১৯ ল্যাব সম্প্রসারণ নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এর আগে গত ৫ জুলাই এন্টিজেনভিত্তিক র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জাতীয় পরামর্শক কমিটিও এন্টিজেন র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে একাধিকবার সুপারিশ জানিয়েছে।
অ্যান্টিজেন টেস্ট কী?
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা সিডিসি-এর তথ্য মতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য ভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাল অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা আসলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এ বিষয়ে ভাইরোলজিস্ট তাহমিনা শারমীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে মূলত শনাক্ত হয় একটি ভাইরাসের প্রোটিন অংশ। পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে যেমন ভাইরাসের নিউক্লিয়িক অংশ শনাক্ত করা হয়, ঠিক তেমন অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত করা হয়।
যখন একজন মানুষ অসুস্থ থাকবেন, তখন তার নমুনা সংগ্রহের পর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রেও নাক বা গলা থেকে সোয়াব বা নমুনা সংগ্রহ করে দেখা হয়, সেখানে ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কি-না। জ্বরের সঙ্গে আরো কোভিডের অন্য উপসর্গ দেখা গেলে নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বরের সঙ্গে আরো কোভিডের অন্য উপসর্গ দেখা গেলে নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
পিসিআর পদ্ধতিতে খুব অল্প পরিমাণ ভাইরাসও শনাক্ত করা সম্ভব। কারণ এটি ভাইরাসকে বৃদ্ধি করে বা অ্যাম্পলিফাই করে তাকে শনাক্ত করে। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ভাইরাসের ছোট একটা অংশ বা নিউক্লিয়িক এসিড থাকলেও সেটি শনাক্ত করা সম্ভব।
কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি ভাইরাসকে অ্যাম্পলিফাই করে না। এই টেস্টের মাধ্যমে শুধু ভাইরাসের উপস্থিতি জানা যায়।
অনেক সময় কোন রোগীর দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কম থাকলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে তার করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি নাও জানা যেতে পারে বলে জানান ভাইরোলজিস্ট তাহমিনা শারমীন।