অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মা সেতু
ফাইলছবি

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অপ্রতিরোধ্য গতিতে প্রমত্তা পদ্মায় এগিয়ে চলছে স্বপ্নের সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। সেতুর ৩১তম স্প্যানে ইতিমধ্যে চার হাজার ৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। বর্তমানে রোডওয়ে, ডেক তৈরিসহ অন্যান্য কাজ চলছে। বন্যার কারণে প্রায় তিন মাস ধরে নতুন কোনো স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। শিগগির ৩২তম সহ বাকি সব স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর বাকি থাকা ১০টি স্প্যান বসানোর পূর্ব পরিকল্পনা থাকলেও পরিকল্পনা এগিয়েছে আরও ১০ দিন। অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি স্প্যানগুলো বসানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। ১০টি স্প্যান বসে গেলে মিলবন্ধন ঘটতে চলেছে পদ্মার দুই পাড় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা অংশে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মূল সেতুর বাকি থাকা ১০টি স্প্যান বসানোর লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেন। সে লক্ষ্যেই কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে সেতুর পিয়ারের উপরে বসানোর জন্য চারটি স্প্যান ‘ওয়ান-এ’, ‘ওয়ান-বি’, ‘ওয়ান-সি’ ও ‘ওয়ান-ডি’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পানি কমলে চলতি মাসে শেষের দিকেই ৩২তম স্প্যান বসানো হবে। পরবর্তী চারটি স্প্যান পিয়ার ১-২, ২-৩, ৩-৪ ও ৪-৫নং এ বসানো হবে। এবং পর্যায়ক্রমে বাকি স্প্যান বসানো হবে। ইতিমধ্যে চীন থেকে পদ্মা সেতু তৈরির সরঞ্জামের শেষ চালান চলে এসেছে।

সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণ শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের কার্যক্রমে সেতু এখন সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের পথে। সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি এবং মূল সেতুর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ২য় স্প্যান, ১০ মার্চ তৃতীয় স্প্যান, ১৩ এপ্রিল চতুর্থ স্প্যান, ২৯ জুন পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়।

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ষষ্ঠ স্প্যান, ২০ ফেব্রুয়ারি সপ্তম স্পেন, ২০ মার্চ অষ্টম স্প্যান, ১৮ এপ্রিল নবম স্প্যান, ১০ মার্চ দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল এগারো তম স্প্যান, ৬ মে ১২ তম স্প্যান, ২৮ জুন ১৪ তম স্প্যান, ২২ অক্টোবর ১৫ তম স্প্যান, ১৯ নভেম্বর ১৬ তম স্প্যান, ২৬ নভেম্বর ১৭ তম স্প্যান, ১১ ডিসেম্বর ১৮ তম স্প্যান, ১৮ ডিসেম্বর ১৯ তম স্প্যান, ৩১ ডিসেম্বর ২০ তম স্প্যান বসানো হয়।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বসানো হয় ২১ তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ২২ তম স্প্যান, ২ ফেব্রুয়ারি ২৩ তম স্প্যান, ১১ ফেব্রুয়ারি ২৪ তম স্প্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫ তম স্প্যান, ১০ মার্চ ২৬ তম স্প্যান, ২৮ মার্চ ২৭ তম স্প্যান, ১০ এপ্রিল ২৮ তম স্প্যান , ৪ মে ২৯ তম স্প্যান, ৩০ মে ৩০ তম স্প্যান আর ১০ জুন সর্বশেষ ৩১ তম স্প্যান পদ্মা সেতুতে বসানো হয়।

৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সবকটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। বহুমুখী এই সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০২১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। করোনাসহ বিভিন্ন কারণে এক বছর সময় পেছাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সালের শেষ দিকে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। বারবার সময় বাড়ার কারণে নির্মাণব্যয়ও বেড়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে