বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গত আগস্টে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। এবার আরও একটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
প্রথম ভ্যাকসিনের অনুমোদনের পরই বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে রাশিয়া। কয়েক মাসের ব্যবধানেই দ্বিতীয় ভ্যাকসিনের অনুমোদনের কথা জানাল দেশটি।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই আরও একটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনার দ্বিতীয় এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে সাইবেরিয়ার ভেক্টর রিসার্চ সেন্টার।
গত সপ্তাহেই মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ট্রায়াল শেষ হয়েছে। মস্কোর গামালিয়া ইন্সটিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিন গত আগস্টে অনুমোদন পাওয়ার পর এর চূড়ান্ত ধাপে কমপক্ষে ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিয়েছে।
২০টি দেশ ‘স্পুটনিক-৫’ নামে রাশিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী বলে সম্প্রতি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ তহবিলের (আরডিআইএফ) প্রধান নিশ্চিত করেছেন।
ইতোমধ্যেই ওই ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি ডোজের অর্ডার এসেছে। তবে রাশিয়া সবার আগে করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদন দিলেও সমালোচকদের দাবি, রাজনৈতিক চাপের কারণে রুশ ভ্যাকসিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঝুঁকির বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে।
রাশিয়াকে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপনে গবেষকদের ওপর দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরিতে চাপ ছিল বলে দাবি অনেকের।
স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনটির এখনও তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাস করা বাকি। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি এ ভ্যাকসিন রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পেয়েছে। শিগগিরই ব্যাপকহারে এর উৎপাদন শুরু হবে।’
তিনি আরও জানান, তার নিজের মেয়ের শরীরেই এর পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এতে ভ্যাকসিনটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তার মেয়ে এই টিকা গ্রহণের পর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেছেন পুতিন।
দ্বিতীয় ভ্যাকসিনটি নিয়েও বেশ আশাবাদী রাশিয়া। এদিকে, সম্প্রতি রাশিয়ার তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর প্রথম ব্যাচ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিকট ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনটির আঞ্চলিক সরবরাহ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ১১ আগস্ট রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বে প্রথম হিসেবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়।
মস্কোর মেয়র সার্গেই সোবিয়ানিন আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বেশিরভাগ বাসিন্দাকে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।
রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচের সরবরাহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে নিকট ভবিষ্যতে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাশিয়ার তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ভি’ নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম বলে। সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ইতিবাচক দিকের কথাও প্রথম সামনে এনেছিল ল্যানসেট। সেখানে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। এতে টি-কোষও সক্রিয় হয়েছে। রাশিয়ার টিকাও একইভাবে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।
এক গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ৭৬ জনকে করোনাভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়া হয়েছিল। ৪২ দিন ধরে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিনের মধ্যেই অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব চললেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনও দেশ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত ১৭৬টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে করোনার অন্যান্য ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন।